আসিফা ফেরারী জীবনের শেষ রাতে জ্বরের ঘোরে এক তেঁতুল গাছের সঙ্গে গল্প করছিল। সে গল্পে দেবদাস আছে, বিদ্যাপতি আছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে, আর আছে এক প্রেমের গল্প - তোমাকে চাই। সেসব নিয়েই শ্রুতিনাটক শুধু তোমার জন্য, আসিফা ট্রিলজির দ্বিতীয় অংশ।এর শুরুতে আছে শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস দেবদাস অবলম্বনে শ্রুতিনাটক দেবদাস পাঠ অভিনয়। আর ক্লাইম্যাক্সে আছে ও’হেনরীর “A Service of Love” গল্পের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত শ্রুতিনাটক “তোমাকে চাই।”
গল্প-গাছা
শ্রুতিনাটক তিহার থেকে বলছি রবিপ্রেমের ফসল। রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাস শেষের কবিতা, ঘরে বাইরে এবং চতুরঙ্গের কিছু অংশ এক কাল্পনিক চরিত্র আসিফার দৃষ্টিতে পাঠ করব আমরা। আসিফা এক রাজবন্দী। লাবণ্য, বিমলা, দামিনীর অন্বেষণে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত মিশে যায়।
রাজবন্দী আসিফার মোট তিনটি উপাখ্যান আছে, তিহার থেকে বলছি তার প্রথম কিস্তি। নাটকের মৌলিক অংশটি রইল।
মাধবী পাহাড় ডিঙিয়ে বেড়ায়। পূজা অ্যাম্বুলেন্স চালায়। রেশমী স্টান্টলেডি ছিল, এখন চোট পেয়ে বসে গিয়ে ক্লাউড কিচেন চালায়। মনোদিদি সমাজের ভ্যালিডেশনের উল্টোদিকে থাকে, লোকে যাকে বলে পাগল। মনোদিদি মন ভালো করতে কবিতা পড়ে। মালতী বেকার মানুষ, মাধবীর জন্য সমাজ-বিরুদ্ধ সমপ্রেম নিয়ে বসে থাকে। শ্যামলী গিগ কর্মী, অ্যাসিড এটাক ভিক্টিম থেকে সার্ভাইভার হবার লড়াই করে যায়। শতভিষা এয়ারফোর্সে আছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে গিয়ে কোনো এক মাধবীর সন্ধান পায় সে। এই মেয়েদের বসন্ত যাপনের গল্প যা কিনা শ্রেণিভেদে সমান্তরাল হবার কথা ছিলো তা মিলে যায় কোনও অপ্রত্যাশিত প্রতিচ্ছেদে। এই নিয়ে গীতি-কবিতা আলেখ্য মধুর বসন্ত, সেই সমস্ত মেয়েদের জন্য, যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া। কথনের কিছু অংশ রইল এখানে।
সাদিক হোসেন, সাকিন মুর্শিদাবাদ
অনামিকা মিত্র, সাকিন উত্তর কলকাতা
রাজযোটক যে নয় সাদিক-অনামিকা তা জানতে কোষ্ঠীবিচার লাগবে না। দুর্গ্রহলগ্নে ওদের জন্ম। তাই তো নেট পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশাপাশি সিট পড়ে। সময় বুঝে কালি খতম হয়ে যায় সাদিকের। ঝট করে পেন বাড়িয়ে দেয় পাশ থেকে অচেনা অনামিকা। ডটপেনের মূল্যবাবদ পরীক্ষার পরের চা আর প্রজাপতি বিস্কুটটা অফার করে সাদিক। তারপর? অনামিকার গালে টোল পড়ে, সাদিকের গিটারে বোল ধরে, কাশফুলে লাগে দোল। যা হবার তাই হয়। অথচ তখন সদ্য নয়ের দশক। বাবরি মসজিদ অক্ষত। ভাবা যায়?
সাদিক অনামিকার প্রেমটা বেশিদিন টেকেনি। কিন্তু টেঁকসই প্রেম ঠিক কেমন? এই যে প্রতি পুজোয় এরা এখনও একজন আরেকজনকে মনে করে চিঠি লেখে, লিখে সে চিঠি রেখে দেয় যার যার ডায়রিতে, এটা প্রেম, না অন্য কিছু? এই চিঠি আর কিছু গান কবিতা নিয়ে শ্রুতিনাটক শরতের খোলা খাম। কিছু চিঠি থাকল এখানে আপনাদের জন্য।
ভরা বর্ষায় আঁচল পেতে বসে থাকে বঙ্গজননী। নদীনালার কূল ছাপিয়ে বন্যা হবে। কিছু রোয়া ধান ভেসে যাবে। কুঁড়ে গোয়াল ছেড়ে একটা ছাগল কি দুটো মুর্গি সম্বল করে হেঁটে যাবে চাষাভুষোর দল। সম্বচ্ছর উদ্বাস্তু হতে হয় তাদের। গ্রামের নেড়িগুলো অবাক চোখে দেখবে একরত্তি ভেলাগুলোতে তাদের ঠাঁই নেই। পরে, রোগব্যাধি ক্ষয়ক্ষতির ষোলকলা পূর্ণ করে, জল সরবে, রেখে যাবে প্লাবনভূমির উত্তরাধিকার।
ভরা বর্ষায় জল বাড়ে তাড়াতাড়ি। নদীতে, রাস্তায়, খাদানে কুলি কামিনরা কাজ বন্ধ করবে, কখনও তার আগেই ঘটে যাবে দুর্ঘটনা। ডুবে নিখোঁজ হয়ে যেতে যেতে মজুরদের মনে পড়বে না কতপুরুষ আগে, বিদেশী রাজাদের শিল্পবিপ্লব হওয়ার আগে, তাদের হাতে লাঙল ছিল, জল সরলে তারা সোনা ফলাত। কোনও এক গাঁয়ের বধূর গোলাভরা ধান ছিলো, উঠোনে আলপনা ছিলো। সে থাক। অপঘাত মানুষকে জাতিস্মর করবে এমন কোনো কথা নেই।
বর্ষামঙ্গল - আমাদের শেকড়ের কথা। গানে কবিতায় ছবি আঁকি।