কথকতার ছলে জীবনের গল্প বলে মেয়েদের দল Mad Balikas
পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 07 নভেম্বর 2024

আহু দারিয়েই বলে আসলে কিছু নেই।

বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি বলবেন ভাইরাল হয়েছিলেন আহু দারিয়েই। আপনি বলবেন হিজাব ছাড়া দুই সন্তানের জননী আহু দারিয়েই তেহরানের ইসলামী আজাদ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছিলেন। পর্দা না করার মত গুনাহ ওখানকার মাতব্বরেরা মোটেও কবুল করেননি। তাঁরা এসে তরুণীকে উত্তম মধ্যম দিয়ে তার ঊর্ধ্বাঙ্গের পোষাক কেড়ে তাঁকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেন। আপনি বলবেন আহু তখন ঊর্ধ্বাঙ্গের লজ্জাবস্ত্রটি শুধু পরেছিলেন। মুখ লুকিয়ে ভেগে যাবার বদলে মাতব্বরদের ক্ষমা টমা পায়ে ঠেলে তখন আহু তার পাতলুনটিও খুলে ফেলেন। তারপর কেবল লজ্জাবস্ত্রটি গায়ে রেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠোনে টহল দিতে শুরু করেন। এই তো হল আপনার আহু দারিয়েইয়ের কিসস্যা।

ধুর। দেখুন তো গুগল নিউজ? আছে কিছু এই নামে? একখানাও সার্চ রেজাল্ট পেলেন? আরে মশাই, নেই তো কিছু, নেই নেই নেই। ইরানের মত চরম গোঁড়া দেশে হেনস্থার প্রতিবাদে ব্রা প্যান্টি পরে কে রাস্তা হাঁটে? তার জান পেয়ারি নয়? ইরানের শান্তিরক্ষকরা বলেছেন তেহরানের ইসলামী আজাদ ইউনিভার্সিটিতে একটা পাগলী পর্দা ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছিল মাত্র, তাকে তাঁরা সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। কোথায় পৌঁছে দিয়েছেন? ও মশাই, শান্তিরক্ষকরা যাকে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে পৌঁছে দেন। এই যেমন ধরুন আমাদের ঘরের মেয়ে ছিল তিলোত্তমা। সে যখন ভরা শহরের ভরা হাসপাতালে ডিউটি দিতে গিয়ে নেই হয়ে গেল, চটপট শান্তিরক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে তার সৎকার সমাধান করেছিলেন। তিলোত্তমার বাপ মা অবধি রা কাড়তে পারেননি, কারণ, শান্তিরক্ষক পরশু সোনি সুরিকে, কাল তিলোত্তমাকে, আজ আহু দারিয়েইকে, পরশু আমাকে বা তরশু আপনাকে সুবিধে মত জায়গায় পৌঁছেই দেবেন, ওতে বিচলিত হবার মত কিছু হয়েছে কি?

তাও দেখুন, বেয়াড়া ঘাড়ত্যাড়া পাবলিকগুলো মানতেই চাইছেনা আহু দারিয়েই বলে কিছু নেই। তারা ফেসবুকে পোস্ট করে, কমেন্ট করে, প্রতিবাদ করে প্রবল হেনস্থা ভোগ করছে। দেখুন, যে পদ্মকলির মত নরম হাত নিয়ে এত এত পদ্য গদ্য, সেইসব হাত আজ শক্ত মুঠো পাকাচ্ছে। ঐ যে, তাদের মুঠোগুলো বাতাসে ঘুষি মেরে ভাসিয়ে দিচ্ছে সেইসব নাম যারা নাকি কখনও কোথাও ছিল না। চুনী কোটাল থেকে মাহসা আমিনি। হাথরাস থেকে বিলকিস বানো। কামদুনি থেকে উন্নাও। তিলোত্তমা থেকে তেহরান।

যে সাহস আজ বাতাসে রাগী গুনগুন তুলছে, তাকে জিজ্ঞেস করলে আহু দারিয়েইকে খুঁজে পাব?

আহু দারিয়েইকে ইরানের নীতিরক্ষকরা পাগলাগারদে পোরার এক সপ্তাহের মাথায় আমরা এইসব অনর্থক প্রশ্ন তুলব। আমাদের কথকতা অহং রাষ্ট্রী আসলে এইসব অস্বস্তিকর প্রশ্নই তোলে। জানি, এখান থেকে তেহরানে আমাদের আওয়াজ আজ পৌঁছাবে না।

হয়ত কোনওদিন অন্য কারোর স্বর হয়ে পৌঁছে যাবে। এই ধুলোবালি আশা নিয়েই কথকতা। কারণ আমরা তো জানি,

মেয়েমানুষের কানাকড়ি যমেও দেয় যে ফাঁকি!

আপনার মতামত

এর উত্তরে Some User

এই বিভাগের অন্যান্য পোস্টসমূহ

  • কালো মেয়ে

    ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য | প্রকাশিত: 25 অক্টোবার 2024

    দুপুরবেলা পড়তে বসে অংকে ভুল হয়ে যায় মেয়ের, মুঠো খানেকের হৃৎপিন্ডে ছলকে ওঠে রক্ত, বেণীমাধবকে দেখে একদৌড়ে সে পালিয়ে যায় ঘরে। বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো, শহুরে, দেখতেও বুঝি রাজপুত্তুরটি।

    কিন্তু, মেয়েটির গায়ের রং যে কালো?

  • ঈদ মোবারক নাসিম

    ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য | প্রকাশিত: 30 মার্চ 2025

    নাসিম, কেমন আছিস?

    আজ ঈদ। ঈদের অকুন্ঠ শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা নিস। আমিও নিলাম। নিয়ে দিয়ে কিছু অতিরিক্ত রয়ে গেলে সেই ভালোবাসায় চল হরির লুট দিই। আমার দিদুন দিতেন তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। তোর নানা সাহেব যেমন যাকাতুল ফিতর দিতেন, রমজানের শেষে।

  • একশো উত্তম

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 24 জুলাই 2024

    উঁহু। এ ছবি দেখার মত দৃষ্টিদান আমাকে তো কেউ করে নি। ও আমি কামনাও করিনে। মর্যাদা বলে তো একটা ব্যাপার আছে না কি? ঐ থোবড়া দেখে গোটা বসু পরিবার দিওয়ানা হয়ে গেল, সে কার পাপে বলে দিতে হবে? মুরোদ সাড়ে চুয়াত্তর পয়সার, আর রোয়াব লাখ টাকার। বৌ ঠাকুরাণীর হাটে বেচে দাও না, ঠেলে উঠবে মরণের পারে। যদিও ওরা থাকে ওধারে, তাও তো চাঁপাডাঙার বৌটাকে ঝাড়ি মারে এন্তার। হাবভাব এমন, উনি অন্নপূর্ণার মন্দির বানিয়ে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছেন যেন।

  • গ্রে স্কেল তিন

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 27 ডিসেম্বর 2024

    টেলিভিশন জিনিসটা যারা আটের দশকে জন্মেছে তাদের জন্য একটা আস্ত জীবন্ত রূপকথা ছিল। এই কর লো দুনিয়া মুঠ্ঠি মে র অনেক আগের দিনকাল সেসব। আমার গল্পটা বলি, জানি এমন গল্প আছে এ দেশের অনেক প্রৌঢ় পাড়ায় পাড়ায়। তখন সদ্য সদ্য একটা আধটা মধ্যবিত্ত বাড়িতে ঢুকছে সাদা কালো টেলেরামা। রামানন্দ সাগরের ডিরেকশনে দারা সিং নতজানু হয়ে বসে বুক চিরে দেখাচ্ছেন রাম সীতার ছোট্ট পোস্টকার্ড সাইজ ছবি।

  • গ্রে স্কেল দুই

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 02 নভেম্বর 2024

    সে ছিল আমাদের সোনালি বিকেলের দিনকাল। সিনেমার হিরোরা বুকের মধ্যে তুফান তুলতেন। হিরোইনরা আঁখিয়োসে গোলি মারতেন। পান সিগারেটের দোকানে নিষিদ্ধ সিনেম্যাগের প্রচ্ছদ থেকে মোহিনী দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকতেন রাংতা পোশাকে জুহি, খালি গায়ে সালমান, হৃদয়ভোলানো হাসিতে মাধুরী, ছেঁড়া স্যান্ডো গেঞ্জিতে অক্ষয়। বাজিগরের জন্য তখন স্কুলে অনেকেই দিওয়ানা। এইসব বয়ঃসন্ধির ক্রান্তিকালে অনেকেই একটু আধটু মৌলবাদী হয়ে উঠতাম। আমার থাকবে সালমান মাধুরী, আর কেউ না।

  • কুত্তা বিল্লি ফ্রী

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 16 আগস্ট 2025

    একটু ইউটোপিয়ার কথা হোক? হ্যাঁ? বেশি না, বছর তিনেক পরে।

    দিল্লি কলকাতা মুম্বাই এখন স্পটলেস ক্লিন। যেদিকে তাকাবেন নো সাইন অফ নেড়ি কুত্তা। কর্পোরেশন সব তুলে সাফ করে দিয়েছে। এখন কুত্তা মানেই বকলস দেওয়া বিলিতি হাইব্রিড। বেশিদিন বাঁচেও না, ইনস্টা স্টোরি ফোরি রিল ফীল হয়ে যাচ্ছে এটাই শান্তি।

  • গুরু প্রণাম

    ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য | প্রকাশিত: 30 নভেম্বর 2024

    তেত্রিশ বছর আগের কথা। ক্লাস ফাইভে আমার প্রথম দিন, গরমের ছুটি পড়বে ঠিক তার পরদিন থেকে। নতুন স্কুলেও সেদিনই আমার প্রবেশ, মহারাষ্ট্র থেকে সদ্য এসেছি কলকাতায়, কথায় কথায় হিন্দি মারাঠি 'ঘুসে' যায় তখনও। মা বাবা ভর্তি করে দিলেন স্থানীয় ইশকুলে। রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠ, বাংলা মাধ্যম, সবুজ স্কার্ট শাদা শার্ট। তবে সেইদিন ছিল রঙ্গিন পোষাকের দিন, গরমের ছুটি পড়ে যাবে এর পর।

  • চা

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 21 মে 2024

    কেটলিতে আধহেমন্তের সকাল বুড়বুড়ি কাটছে। ঐ ঘাড়ে ঘাড়ে জোলো দুধ আর চিনির ডেলা পড়ল। রং দেখ, যেন সাক্ষাৎ মে মাসের দুপুর। সামান্য শিউরে উঠলেন সাঁপুইবাবু। হাতে হাতে পাচার হয়ে যে ভাঁড়টা এসে পৌঁছল তার খোঁদলে উষ্ণ তরলের ওপর পুরু সর। তাও মুখ দেখার ব্যর্থ চেষ্টা তিনি করবেনই। রোজকার মতন। রিফ্লেক্স।