আহু দারিয়েই বলে আসলে কিছু নেই।
বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি বলবেন ভাইরাল হয়েছিলেন আহু দারিয়েই। আপনি বলবেন হিজাব ছাড়া দুই সন্তানের জননী আহু দারিয়েই তেহরানের ইসলামী আজাদ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছিলেন। পর্দা না করার মত গুনাহ ওখানকার মাতব্বরেরা মোটেও কবুল করেননি। তাঁরা এসে তরুণীকে উত্তম মধ্যম দিয়ে তার ঊর্ধ্বাঙ্গের পোষাক কেড়ে তাঁকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেন। আপনি বলবেন আহু তখন ঊর্ধ্বাঙ্গের লজ্জাবস্ত্রটি শুধু পরেছিলেন। মুখ লুকিয়ে ভেগে যাবার বদলে মাতব্বরদের ক্ষমা টমা পায়ে ঠেলে তখন আহু তার পাতলুনটিও খুলে ফেলেন। তারপর কেবল লজ্জাবস্ত্রটি গায়ে রেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠোনে টহল দিতে শুরু করেন। এই তো হল আপনার আহু দারিয়েইয়ের কিসস্যা।
ধুর। দেখুন তো গুগল নিউজ? আছে কিছু এই নামে? একখানাও সার্চ রেজাল্ট পেলেন? আরে মশাই, নেই তো কিছু, নেই নেই নেই। ইরানের মত চরম গোঁড়া দেশে হেনস্থার প্রতিবাদে ব্রা প্যান্টি পরে কে রাস্তা হাঁটে? তার জান পেয়ারি নয়? ইরানের শান্তিরক্ষকরা বলেছেন তেহরানের ইসলামী আজাদ ইউনিভার্সিটিতে একটা পাগলী পর্দা ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছিল মাত্র, তাকে তাঁরা সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। কোথায় পৌঁছে দিয়েছেন? ও মশাই, শান্তিরক্ষকরা যাকে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে পৌঁছে দেন। এই যেমন ধরুন আমাদের ঘরের মেয়ে ছিল তিলোত্তমা। সে যখন ভরা শহরের ভরা হাসপাতালে ডিউটি দিতে গিয়ে নেই হয়ে গেল, চটপট শান্তিরক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে তার সৎকার সমাধান করেছিলেন। তিলোত্তমার বাপ মা অবধি রা কাড়তে পারেননি, কারণ, শান্তিরক্ষক পরশু সোনি সুরিকে, কাল তিলোত্তমাকে, আজ আহু দারিয়েইকে, পরশু আমাকে বা তরশু আপনাকে সুবিধে মত জায়গায় পৌঁছেই দেবেন, ওতে বিচলিত হবার মত কিছু হয়েছে কি?
তাও দেখুন, বেয়াড়া ঘাড়ত্যাড়া পাবলিকগুলো মানতেই চাইছেনা আহু দারিয়েই বলে কিছু নেই। তারা ফেসবুকে পোস্ট করে, কমেন্ট করে, প্রতিবাদ করে প্রবল হেনস্থা ভোগ করছে। দেখুন, যে পদ্মকলির মত নরম হাত নিয়ে এত এত পদ্য গদ্য, সেইসব হাত আজ শক্ত মুঠো পাকাচ্ছে। ঐ যে, তাদের মুঠোগুলো বাতাসে ঘুষি মেরে ভাসিয়ে দিচ্ছে সেইসব নাম যারা নাকি কখনও কোথাও ছিল না। চুনী কোটাল থেকে মাহসা আমিনি। হাথরাস থেকে বিলকিস বানো। কামদুনি থেকে উন্নাও। তিলোত্তমা থেকে তেহরান।
যে সাহস আজ বাতাসে রাগী গুনগুন তুলছে, তাকে জিজ্ঞেস করলে আহু দারিয়েইকে খুঁজে পাব?
আহু দারিয়েইকে ইরানের নীতিরক্ষকরা পাগলাগারদে পোরার এক সপ্তাহের মাথায় আমরা এইসব অনর্থক প্রশ্ন তুলব। আমাদের কথকতা অহং রাষ্ট্রী আসলে এইসব অস্বস্তিকর প্রশ্নই তোলে। জানি, এখান থেকে তেহরানে আমাদের আওয়াজ আজ পৌঁছাবে না।
হয়ত কোনওদিন অন্য কারোর স্বর হয়ে পৌঁছে যাবে। এই ধুলোবালি আশা নিয়েই কথকতা। কারণ আমরা তো জানি,
মেয়েমানুষের কানাকড়ি যমেও দেয় যে ফাঁকি!