কথকতার ছলে জীবনের গল্প বলে মেয়েদের দল Mad Balikas
পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 16 আগস্ট 2025

একটু ইউটোপিয়ার কথা হোক? হ্যাঁ? বেশি না, বছর তিনেক পরে।

দিল্লি কলকাতা মুম্বাই এখন স্পটলেস ক্লিন। যেদিকে তাকাবেন নো সাইন অফ নেড়ি কুত্তা। কর্পোরেশন সব তুলে সাফ করে দিয়েছে। এখন কুত্তা মানেই বকলস দেওয়া বিলিতি হাইব্রিড। বেশিদিন বাঁচেও না, ইনস্টা স্টোরি ফোরি রিল ফীল হয়ে যাচ্ছে এটাই শান্তি।

বিল্লি ফিল্লি সিনেই নেই। এসব আচ্ছে দিনে নোংরা জানোয়ার রাস্তায় থাকবে নাকি? পার্শিয়ান ক্যাট বাড়িতে থাকতেই পারে, নট ইন রাস্তা।

আপনি একটু ওয়াক করতে বেরিয়েছেন।ডক্টর বলেছেন ওয়াক করতে। অ্যানজাইটি কমবে। বাচ্চাটার ধুম জ্বর। আয়া পাওয়া চাপ, কাগজ ফাগজ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে বলে তল্লাটে কেউ নেই। আপনি একা সামলাচ্ছেন। অ্যানজাইটি হবেই। একটু ওয়াক করে চলে যাবেন। কুত্তা বিল্লি নেই যখন দারুন ওয়াক হবে। রাস্তায় কুকুরের গু ফু দেখে ওয়াক পাবে না। ভিখিরি হোমলেসদের তো তুলে সমুদ্রে ফেলেই দিয়েছে। কি ঝকঝকে চারপাশ। এখন যেখানে খুশি ফোটো খিচিক।

জল তেষ্টা পাচ্ছে। বাড়িতে সিপার ফেলে এসেছেন। চারপাশে এত দোকান কোথাও জল নেই। হিমালয়ান ওয়াটার কোম্পানিগুলো ফেল মেরেছে। অত ফ্ল্যাশ ফ্লাড হলো না? এদিকে সব কালারফুল ড্রিংক। ওদিকে গাছ ফাছ ছিলো আগে। পাখি এসে নোংরা করত। এখন সব ক্লিন। দারুণ সব দোকান। মল। সফ্ট ড্রিংক খাবেন? দূর ওসব বারণ। একটু দাঁড়িয়ে ডিপ ব্রিদ করুন। ইশ ইঁদুর পচা গন্ধ আসছে কেন? ওয়াক থু!

আরে আবার কাশিটা ফেরত এলো? ইশ মাস্ক কোথায়? পড়ুন পরুন। লিপ গ্লস ঘেঁটে যাক, পার্থেনিয়াম আছে নাকি এদিকে? কি ন্যাসটি ব্যাপার! একটা পোস্ট দিন তো দাঁড়িয়ে?

ঠিক তখনই কলটা এলো। আপনাকে ডকুমেন্ট দেখাতে ডেকে পাঠিয়েছে সরকারি কাগজ দফতর। নো এজেন্ট বিজনেস। কল রাখতেই আবার ফোন। এবারে বাড়ি থেকে। আপনার অশীতিপর বাপ মাকেও কাগজ দফতর ডেকে পাঠিয়েছে। যেতে হবে। নো এজেন্ট বিজনেস। হোলি শিট! ওই অফিসে কি এসি আছে? এই গরম পলিউশন, এর মধ্যে নন এসি অ্যারেঞ্জমেন্ট হলে কি করে হবে? তারপর কালকেই ডেট। এদিকে পেস্ট কন্ট্রোল আসার কথা কাল। ইঁদুর বেড়েছে খুব, সব কেটে নাশ করছে।

আপনার “কী করে হবে” প্যানিকটা বাড়ছে যখন ঠিক তখনই। পায়ের গোছে কূট করে কি কামড়ালো? পাশ দিয়ে হু হু করে গাড়ি যাচ্ছে, মানুষ যাচ্ছে। কারুর টাইম নেই দেখার। আপনি কাশির ধমকে স্পটলেস ক্লিন রাস্তার ওপরে বসে পড়ছেন। চোখে ঝাপসা দেখছেন নাকি? অবশ লাগছে? পায়ের গোছে দুটো বিন্দু ক্রমশ বড় হচ্ছে।

ইউটোপিয়ায় থাকতে গেলে এটুকু সইতে পারবেন না?

আপনার মতামত

এর উত্তরে Some User

এই বিভাগের অন্যান্য পোস্টসমূহ

  • ঈদ মোবারক নাসিম

    ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য | প্রকাশিত: 30 মার্চ 2025

    নাসিম, কেমন আছিস?

    আজ ঈদ। ঈদের অকুন্ঠ শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা নিস। আমিও নিলাম। নিয়ে দিয়ে কিছু অতিরিক্ত রয়ে গেলে সেই ভালোবাসায় চল হরির লুট দিই। আমার দিদুন দিতেন তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। তোর নানা সাহেব যেমন যাকাতুল ফিতর দিতেন, রমজানের শেষে।

  • গ্রে স্কেল তিন

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 27 ডিসেম্বর 2024

    টেলিভিশন জিনিসটা যারা আটের দশকে জন্মেছে তাদের জন্য একটা আস্ত জীবন্ত রূপকথা ছিল। এই কর লো দুনিয়া মুঠ্ঠি মে র অনেক আগের দিনকাল সেসব। আমার গল্পটা বলি, জানি এমন গল্প আছে এ দেশের অনেক প্রৌঢ় পাড়ায় পাড়ায়। তখন সদ্য সদ্য একটা আধটা মধ্যবিত্ত বাড়িতে ঢুকছে সাদা কালো টেলেরামা। রামানন্দ সাগরের ডিরেকশনে দারা সিং নতজানু হয়ে বসে বুক চিরে দেখাচ্ছেন রাম সীতার ছোট্ট পোস্টকার্ড সাইজ ছবি।

  • একশো উত্তম

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 24 জুলাই 2024

    উঁহু। এ ছবি দেখার মত দৃষ্টিদান আমাকে তো কেউ করে নি। ও আমি কামনাও করিনে। মর্যাদা বলে তো একটা ব্যাপার আছে না কি? ঐ থোবড়া দেখে গোটা বসু পরিবার দিওয়ানা হয়ে গেল, সে কার পাপে বলে দিতে হবে? মুরোদ সাড়ে চুয়াত্তর পয়সার, আর রোয়াব লাখ টাকার। বৌ ঠাকুরাণীর হাটে বেচে দাও না, ঠেলে উঠবে মরণের পারে। যদিও ওরা থাকে ওধারে, তাও তো চাঁপাডাঙার বৌটাকে ঝাড়ি মারে এন্তার। হাবভাব এমন, উনি অন্নপূর্ণার মন্দির বানিয়ে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছেন যেন।

  • চা

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 21 মে 2024

    কেটলিতে আধহেমন্তের সকাল বুড়বুড়ি কাটছে। ঐ ঘাড়ে ঘাড়ে জোলো দুধ আর চিনির ডেলা পড়ল। রং দেখ, যেন সাক্ষাৎ মে মাসের দুপুর। সামান্য শিউরে উঠলেন সাঁপুইবাবু। হাতে হাতে পাচার হয়ে যে ভাঁড়টা এসে পৌঁছল তার খোঁদলে উষ্ণ তরলের ওপর পুরু সর। তাও মুখ দেখার ব্যর্থ চেষ্টা তিনি করবেনই। রোজকার মতন। রিফ্লেক্স।

  • গ্রে স্কেল চার

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 24 জুলাই 2025

    সেও এক দিন ছিল!

    ষাটের শেষ, কিংবা সত্তরের শুরু। উঠতি বয়সের সিড়িঙ্গে এক ছোকরা চায়ের দোকানে বিড়ি ফুঁকছে। যেমন ধারালো মুখ তেমন ধারালো জিভ। ফাঁকিবাজ আবার পরোপকারী বলে দুর্নাম। এর বাপকে নালিশ দেবার সাহস কার আছে? মহেশ বাঁড়ুয্যে ডাকসাইটে পণ্ডিত। মামুলি সরকারী চাকুরে হতেই পারেন, কিন্তু খড়ম, সংস্কৃত আর অঙ্কে গায়ত্রী জপেন। তাঁর মেজ ছেলে এমন মারকুটে দুর্মুখ ধারা কোথা থেকে পেলে কেউ জানে না।

  • গ্রে স্কেল দুই

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 02 নভেম্বর 2024

    সে ছিল আমাদের সোনালি বিকেলের দিনকাল। সিনেমার হিরোরা বুকের মধ্যে তুফান তুলতেন। হিরোইনরা আঁখিয়োসে গোলি মারতেন। পান সিগারেটের দোকানে নিষিদ্ধ সিনেম্যাগের প্রচ্ছদ থেকে মোহিনী দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকতেন রাংতা পোশাকে জুহি, খালি গায়ে সালমান, হৃদয়ভোলানো হাসিতে মাধুরী, ছেঁড়া স্যান্ডো গেঞ্জিতে অক্ষয়। বাজিগরের জন্য তখন স্কুলে অনেকেই দিওয়ানা। এইসব বয়ঃসন্ধির ক্রান্তিকালে অনেকেই একটু আধটু মৌলবাদী হয়ে উঠতাম। আমার থাকবে সালমান মাধুরী, আর কেউ না।

  • আহু দারিয়েই

    পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় | প্রকাশিত: 07 নভেম্বর 2024

    আহু দারিয়েই বলে আসলে কিছু নেই।

    বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি বলবেন ভাইরাল হয়েছিলেন আহু দারিয়েই। আপনি বলবেন হিজাব ছাড়া দুই সন্তানের জননী আহু দারিয়েই তেহরানের ইসলামী আজাদ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছিলেন। পর্দা না করার মত গুনাহ ওখানকার মাতব্বরেরা মোটেও কবুল করেননি। তাঁরা এসে তরুণীকে উত্তম মধ্যম দিয়ে তার ঊর্ধ্বাঙ্গের পোষাক কেড়ে তাঁকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেন।

  • গুরু প্রণাম

    ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য | প্রকাশিত: 30 নভেম্বর 2024

    তেত্রিশ বছর আগের কথা। ক্লাস ফাইভে আমার প্রথম দিন, গরমের ছুটি পড়বে ঠিক তার পরদিন থেকে। নতুন স্কুলেও সেদিনই আমার প্রবেশ, মহারাষ্ট্র থেকে সদ্য এসেছি কলকাতায়, কথায় কথায় হিন্দি মারাঠি 'ঘুসে' যায় তখনও। মা বাবা ভর্তি করে দিলেন স্থানীয় ইশকুলে। রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠ, বাংলা মাধ্যম, সবুজ স্কার্ট শাদা শার্ট। তবে সেইদিন ছিল রঙ্গিন পোষাকের দিন, গরমের ছুটি পড়ে যাবে এর পর।