নাসিম, কেমন আছিস?
আজ ঈদ। ঈদের অকুন্ঠ শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা নিস। আমিও নিলাম। নিয়ে দিয়ে কিছু অতিরিক্ত রয়ে গেলে সেই ভালোবাসায় চল হরির লুট দিই। আমার দিদুন দিতেন তুলসীতলায় দাঁড়িয়ে। তোর নানা সাহেব যেমন যাকাতুল ফিতর দিতেন, রমজানের শেষে।
আর ফালিকাটা চাঁদ সহস্রাব্দের আলো নিয়ে দিনদুনিয়ার মালিক মজদুর সব একাকার করে দিত। সেই সব চাঁদ অনেক প্রাচীন সময়ের বাসিন্দা ছিল। সেই সব চাঁদ হলফ মেনে বলত নতজানু বাবরের ডাকে বা একশো আট পদ্মে অকালবোধনে নাকি সত্যিই প্রাচীন দেবতারা সাড়া দেন, অনেক প্রাচীন দেবতা তাঁরা।
আচ্ছা, তুই বল, সেই সব চাঁদ একটু মোলায়েম, ঠান্ডা ঠান্ডা ছিল না? এখনকার চাঁদগুলো বড় তীক্ষ্ণ, ভালো করে চাইলে বোঝা যায়, ক্ষয়ে যাওয়া পাথুরে পুকুরঘাটের মতো, পিচ্ছিল।
মজার কথা শুনবি, আমার দিদুনের হরির লুটের বাতাসাও সেই সব প্রাচীন স্বাদের স্মৃতি মাত্র হয়ে গেছে! ভেবে দেখ - বাতাসার মতো অমন অকিঞ্চিতকর একটা খাবার! একফোঁটা গরম গুড় মাত্র! সেটারও কেমন বেজায় উন্নয়ন হয়েছে। কত বাজার ঘুরে দেখেছি, দ্বিগুণ দামে খাঁটি-হাতে তৈরী-জৈব-ইত্যাদি কিনে এনে দেখেছি, মুখে ভরে অচ্ছে দিনের রস বুড়বুড়ি কাটছে, বাতাসা কই?
যাক গে, ছাড়।
জানিস, একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করেছিস? কত কথা হতে থাকে রোজ, কত কথা শুনি, অনেক কথা হয়, রাশি রাশি শব্দ। সেই সব শব্দগুলো, দেখবি একটু নজর করে, দিনে দিন একটু একটু করে কেমন ক্ষয়াটে কোণা ভাঙা চাঁদের মতো ধারালো থেকে ধারালো হচ্ছে। তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর। অল্পেস্বল্পেই ছিঁড়েকুটে ঘা করে দেয়। সেই সব ক্ষত কবে যে নিজের থেকেই আরও বিক্ষত হয় টেরও পাবি না। তাই, সাবধানে থাকিস। সাবধানে রাখিস। কথা থেকে সামলে থাকিস।
আজ তো ভালোবাসার দিন। সাবধানে থাকুক ভালোবাসা। ঈদ মোবারক।