কার্তিকী অমাবস্যা বড় ধুমধাম
চতুর্দশীতে লই পূর্বনারীর নাম।
অমানিশা তিথি অযোধ্যা পুণ্য ধাম
চোদ্দ বছর পরে ফেরেন সিয়া রাম।
দীপাবলির আলোকে জাগে দশ দিক।
কোজাগর আশ্বিনের পর দীপান্বিতা কার্তিক।
ক্ষেত জাগে, খনি জাগে, যতেক কুলি কামিন
জেগে আছে সুখী দুঃখী সকল ভক্তজন।
হিমালয় রোষে ওঠে, জগত কাতর
ভরা নদী কূল ছাপে আশ্বিন ভাদর।
মানুষের লোভে আজ মানুষেরে হানে
এসো মাগো ত্বরা করি বাংলার থানে।
লক্ষ্মী বলে ডাকি যারে করি তারে হেলা
শস্য ধান্য আজ বিষে ধন্য হই গেলা।
অলক্ষ্মী বলে যারে দিলা নির্বাসন
সেই বুঝি করিত এই গরল নিবারণ।
ভারত পড়িব আর ধরিব রামায়ণ।
বহুকালের ইতিকথা করিব বর্ণন।
ভানু মতি ভনে শোনো অদ্ভুত এই কথা
লক্ষ্মী অলক্ষ্মীর এই আশ্চর্য গাথা।
লোক ও লৌকিক
উমা বিদায়ের পরের মনখারাপ মেশানো রাত। কোজাগরী পূর্ণিমার সেই রাত্রিতে ভানু আর মতি ফিরে দেখে লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মীর পুরাণ—বেদ, ব্রত, শিল্প আর ইতিহাসের আলো-অন্ধকারে। কেন এক বোন পূজিত আর অন্য বোন নির্বাসিতা? কেন ফর্সা লক্ষ্মী ঘরে আর কৃষ্ণবর্ণা অলক্ষ্মী বাইরে?
মহাভারতের সমুদ্র মন্থন থেকে রিফিউজি বাংলার সরা শিল্প পর্যন্ত—এ পর্বে খুঁজে দেখি, লোকদেবীর বদলে যাওয়ার রহস্য।
ভানু আর মতি শোনাচ্ছে দুর্গাপুজোর সাতকাহন—ভোগের স্বাদ থেকে বর্গীর দুর্ভোগ, গুপ্তধনের জনশ্রুতি থেকে এক কিশোরীর রহস্যময় অন্তর্ধান। ইতিহাস, লোকগাথা আর রহস্য কাহিনি মিশে এক অনন্য গল্পকথন।
দুর্গাপুজো মানেই ভোগ, আনন্দ আর উৎসব। তবে এর মাঝেও আছে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, লোকদেবী হয়ে ওঠার কাহিনি, ডাকাত, গুপ্তধন আর নিষিদ্ধ জনশ্রুতি।
মহালয়ার ভোরের আকাশে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ কি এখনও জাগিয়ে রাখে বাঙালির শিকড়ের বারোয়ারি উত্তরাধিকার? পলাশীর যুদ্ধ থেকে সিমলা ব্যায়াম সমিতির দ্রোহী দুর্গাপুজো, ইছাই ঘোষের শ্যামরূপা থেকে গুপ্তিপাড়ার প্রথম সার্বজনীন পুজো—সবকিছুর ভেতরেই লুকিয়ে আছে মাতৃপূজক বাঙালির অবাধ্যতার ইতিহাস।
বাঙালির রথ আসে পাঁপড় ভাজা মড়মড়িয়ে আর জিলিপির রস ঝরঝরিয়ে। ঐতিহ্য না লোকাচার? দূর মশাই, সব এসে মিলে যায় ভিয়েনে বসানো পেল্লাই কড়াইয়ের টগবগে তেলে। রথের দিনে জিলিপি, পাঁপড় ভাজা খাওনি? অ্যাই তুমি বাঙ্গালি তো? অথচ এই দু’টি খাবারের একটির জন্মও সম্ভবত বাংলায় নয়।