ভাষ্য
মিত্রাণি ধনধান্যানি প্রজানাং সম্মতানিব। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।।
"আমার অভাব যে তোমাকে পাগল করে তুলেছে তা আমি জানি। মাগো, আমি শুনেছি তুমি ঘরের দরজায় বসে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছো - ওগো তোমরা আমার রাণীশূন্য রাজ্য দেখে যাও! মা গো, তুমি অমন করে কেঁদো না। আমি যে সত্যের জন্য- স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কি করবে মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী যে বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃংখলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?"
আত্ম বলিদানের আগের দিন অজ্ঞাতবাস থেকে এই চিঠি লিখেছিলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তাঁর মায়ের আদরের রানী।
স্বাধীনতার স্বাদ ঠিক কেমন ছিল? রক্ত ঘাম চোখের জলের মতো? নোনতা? রসমঙ্গল সমগ্রে আজ স্বাধীনতার স্বাদ দ্বিতীয় পর্ব। আমাদের এই পর্ব আজ স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজতে রসবতী থেকে নামবে মিছিলে, দাঁড়াবে শাসকের উদ্যত লাঠির সামনে, দৌড়বে সত্যাগ্রহ থেকে সশস্ত্র বিপ্লবের মাঝখানে। মধ্যরাতে আসা স্বাধীনতা, উপনিবেশের ভূত তাড়ানো স্বাধীনতা। তার স্বাদের খোঁজ পাওয়া সোজা কথা নয়!
ভূত তাড়ানোর কথাই যদি উঠল তবে রামধুন দিয়ে শুরু করি? তুলসীদাসজির লেখা ভজন যিনি দেশের জন্য দশের সাহস জোগাতে সামান্য অদল বদল করছেন, তিনিও কিন্তু ছেলেবেলায় বেজায় ভূতে ভয় পেতেন! আত্ম জীবনী মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথে তিনি বলেছেন তো, ছোটবেলায় তার বেজায় ভূতের ভয় ছিলো। তখন রম্ভা দাইমা তাঁকে রাম নাম করতে শেখান। তা সে ছেলে বড় হয়ে এমন রাম ধুন গাইবে যে স্বয়ং ব্রিটিশ শাসক ডরিয়ে উঠবে তাই বা কে জানত?
রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিতা পাবন সীতারাম সীতারাম, সীতারাম, ভজ প্যারে তু সীতারাম ঈশ্বর আল্লাহ তেরো নাম সব কো সন্মতি দে ভগবান
এই গান কিন্তু বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বেজায় বিতর্কিত। তবে আমরা তো এখন এই সময়ে নেই। আমরা পৌছে গেছি ১৯৩০ সালে। এই ধুন যখন সারা দেশকে মাতিয়ে তুলছে, যখন চলছে লবণ সত্যাগ্রহ। স্বাধীনতার স্বাদ নোনতা কিনা বলা কঠিন, তবে আমাদের রক্তাক্ত স্বাধীনতার মূল্য যে নুনের থেকে কিছু কম নয় সে তো আমরা সবাই জানি।
নুন? তার আবার কি বা দাম? সে তো কল কারখানায় উপজাত দ্রব্য, যারে কয় সস্তার বাই প্রোডাক্ট! তাই নিয়ে একটা গোটা আন্দোলন হয়ে গেল?
নুনের গুণে যুগে যুগে দেশ উজাড় হয়েছে, ইতিহাস সাক্ষী। রসায়ন শাস্ত্র বিপ্লব আনার আগে নুন বস্তুটি কলে নয়, একেবারেই প্রকৃতির কোলে জন্মাত। কথায় আছে যার নুন খাই তার গান গাই। উপায় কী? আলুনি খাবার কি আর মুখে রোচে বলুন?
আবার নুন ছাড়া খাবার জমিয়ে রাখা মুশকিল। ইউরোপ আমেরিকায় মাংস কিওর করে রাখাই হত নুন দিয়ে। এভাবে জমালে তবেই যুদ্ধের সময় সেনারা খেতে পাবেন। সিভিল ওয়ারের সময়ই তো, আমেরিকার দক্ষিণ অংশ নুনের অভাবে বেজায় বিপাকে পড়েছিল। তাদের সৈন্যদলের খাবার সব পচে একশা কাণ্ড।
এদিকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ভারতবর্ষের দুই প্রান্তে প্রাচীন সাগরতট বাবদ নুনের অফুরান ভাণ্ডার। তাই বুঝি ভারতের রসবতীতে রসের তুফান উঠতে বাধা হয় নি কখনও। পশ্চিমে গুজরাত, পূর্বে উড়িষ্যা-বঙ্গদেশে সমুদ্রের নুনের ঢালাও সম্ভার, আবার রাজস্থানের সম্ভর সল্ট লেক, যা কিনা প্রাকৃতিক ভাবেই আয়োডিন যুক্ত। এহেন সম্পদে ধনী উপনিবেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মানদণ্ড যেভাবে দিশি নুনের বস্তায় ঢুকে পড়ল সে কালা কাহিনী ছাড়া আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।
অথচ গান্ধীজি যখন কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে ইংরেজ সরকারের লবণ কর নিয়ে বাগাওয়াতের প্রস্তাব রাখলেন তাবড় তাবড় নেতারা হেসেই ফেলেছিলেন। জমিজমা নিয়ে আন্দোলন তাও ভাবা যায়। নিদেন পক্ষে দিশি কাপড়, দিশি শিক্ষা! মানে শিক্ষিত মানুষের ভদ্রলোক নেতাদের আন্দোলন আর কি যেমন হওয়া উচিত! কে ভেবেছিল সামান্য নুন নিয়ে আন্দোলন এত সাংঘাতিক ইতিহাস তৈরি করবে? ষাটোর্ধ মহাত্মা গান্ধী ছাড়া?
বারোই মার্চ, ১৯৩০। সবরমতি আশ্রম থেকে মাত্র আটাত্তর জন সঙ্গী নিয়ে ডান্ডি মার্চ শুরু করলেন গান্ধীজি। গুজরাতের উপকূলে ডান্ডি গ্রাম গন্তব্য। দাবি দেশের মানুষ যেন দেশের নমক খেতে পারেন, নিজেরা নুন বানাতে পারেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা বহুমূল্য নুন কিনে আনতে গিয়ে পান্তা ফোরানোর দুঃখ লাঘব হয়। কে জানত নুনের ওপরে ব্রিটিশ সরকারের মনোপলি আর লবণ কর এভাবে দেশের আম হেশেলে দ্রোহের বীজ বুনেছে? চব্বিশ দিন পরে ২৪০ মাইল যাত্রা শেষে যখন হাজার হাজার মানুষের ভিড় এসে পৌঁছল আরব সাগরের তীরে, স্বাধীনতা আসতে তখনও দেরি সতের বছর চার মাস দশ দিন। ডান্ডি মার্চের শেষে প্রতীকী আইন অমান্য করে গ্রেফতার হলেন গান্ধীজী। শুরু হল লবণ সত্যাগ্রহ।
তাহলে কি কেবল পশ্চিম উপকূলেই নুনের দাবি ইতিহাস তৈরি করল? বঙ্গোপসাগরের ঢেউও কম রক্ত ধুয়ে দেয় নি।
মেদিনীপুরের দ্রোহের মাটি মলঙ্গি থেকে পিছাবনি - কত গল্প বলছে শুনবেন আসুন।
জলে জন্ম তার নগরে তে বাস মা ছুঁলে ছা মরে একি সর্বনাশ
ধাঁধাই বলুন কি ছড়া, এর মর্মার্থ সন্ধব লবণের কথাই বলছে বটে। তবে বাঙালি নুন শ্রমিক মলঙ্গিরা এই ছড়া কাঁথির নুন খাদানে গুনগুন করত সে এক রকম। মেদিনীপুর থেকে সিংভুম হয়ে পুরুলিয়া আবার ওদিকে কুমিল্লা অবধি কেমন করে পৌঁছে গেল এই ধাঁধা?
এর উত্তর খুঁজতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন থেকে দেড়শো বছর পিছিয়ে যেতে হবে আমাদের। সদ্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেছে। তারপর? কাঁথি হিজলি তমলুক এখন কোম্পানির নুনের খাদান। বাচ্চা বুড়ো নির্বিশেষে লবণ শ্রমিক। লোকায়ত নাম মলঙ্গী। অথচ নবাবি আমল অবধি মলঙ্গীদের সম্মান, প্রতিপত্তি, রোজগার ছিলো সমাজের প্রথম স্তরে। লবণ ব্যবসা লাভজনক হবেই, যেখানে প্রাকৃতিক ভান্ডার উপচে পড়ছে। কিন্তু সেই লবণ যবে থেকে কোম্পানির জাহাজে চেপে দেশের বাইরে পাড়ি দিল, তবে থেকে ব্যবসার মনোপলি গেল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। আর মলঙ্গিরা? তাঁরা হয়ে উঠলেন উপনিবেশের নুন শ্রমিক, যে নুনে তাঁদের কোনও অধিকার নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন ওভারটাইম, নুনের মধ্যে থেকে ঘা হয়ে গেলেও কুছ পরোয়া নেই। কোম্পানির জুলুমবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে মলঙ্গীরা মুখে মুখে ছড়িয়ে দিলেন সর্বনাশা নুনের ছড়া।
ঝরঝরঝর ঝাঁঝরা কুলা, তোমার দেশের ভাই এ জলটুক পার কর্রা দে, আমি যাব একলাই (মেদিনীপুর) জলে জন্ম স্হলে কর্ম, নগরে তে বাস (সিংভূম) জন্মিয়া মায়ের দুধ নাহি করি আশ (পুরুলিয়া) মা ছুঁলে ছা মরে, এই তো সর্বনাশ
প্রাণের ভয়ে স্থানীয় মানুষ মলঙ্গী হতে চাইছেন না দেখে কোম্পানি বাহাদুর ঢেঁড়া পিটিয়ে দিল। লোক চাই। কোম্পানির দারুণ চাকরি। সিংভুম থেকে কুমিল্লা, গরিব বাঙালি মজুরের তো কমতি নেই মন্বন্তরের উপনিবেশে! নুনের ধাঁধাও ছুটল হাওয়ায়, গান ছড়ার ছদ্মবেশে সর্বনেশে কোম্পানির নুন থেকে সাবধান! সাবধান!
কতদিন আর নুন খাদানে পিষে যেতেন মলঙ্গিরা? কতদিন মুখ বুজে সইতেন লোকসান?
যন্ত্রণা, রোষ জমাট বেঁধে একদিন বিদ্রোহ হয়ে উঠল। ফেটে পড়লেন খেজুরি কাঁথি দীঘা তমলুকের ষাট হাজার মলঙ্গী। প্রেমানন্দ সরকারের ডাকে এগিয়ে এলেন রাম দিনদা, ভগবান মাইতি, হারু পাত্র, জয়দেব সাহু, বৈষ্ণব ভুইঞা আরও অনেকে। জ্বলে উঠল মলঙ্গ বিদ্রোহের আগুন।
সে তো সিপাহী বিদ্রোহের আগের ঘটনা! তারপর? বিদ্রোহ কি ব্যর্থ হলো?
শোনা যায় মলঙ্গিদের দাবি মেনে নিয়েছিল কোম্পানী। দ্রোহের আগুন দেখে ভয় খেয়ে তারা মেদিনীপুরের নাম রেখেছিল ল্যান্ড অফ রিভোল্ট।
দিশি নুনের ওপর দিশি মানুষের অধিকার? এলো?
না, তা আসতে সাতচল্লিশের স্বাধীনতা লাগবে। তবে মলঙ্গি বিদ্রোহ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো কোম্পানির জালিম হুকুমত উপড়ে ফেলতে রাজা মন্ত্রী হাতি ঘোড়া প্রয়োজন নেই। বোড়েরাও পারে। রাজা উজির নাহলে সিপাহীরাও পারে। মহাবিদ্রোহের কারণ হিসেবে ইতিহাসে যে বড় তালিকা থাকে, মলঙ্গি বিদ্রোহ সেই এলিট লাস্টে ঠাঁই না পাক, ক্রোনোলজিতে সে থেকে যাবে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বসূরি হয়ে।
মহাবিদ্রোহের পরের ঘটনা। কোম্পানির থেকে রাজদণ্ড ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে রানীর হাতে। ব্রিটিশ সিংহের হুঙ্কারে দেশীয় রাজারা সহজে ভড়কে যাচ্ছেন। রানীর সৈন্য দেখে তাঁদের আক্কেল গুড়ুম। এই মওকায় পশ্চিম উপকূলে রাজাদের থেকে নাম মাত্র মূল্যে নুনের অধিকার সিন্দুকে তুলল সরকার বাহাদুর। ৪০০০ মাইল জুড়ে কাঁটা গাছ পুঁতে বোনা হলো কাস্টমস লাইন। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান হেজ। অতএব এবার থেকে ভারতের দুই উপকূলেই নুনের সমস্ত ভাণ্ডারে নিঃশর্ত অধিকার কেবল ইংরেজ সরকারের। ভাত রুটির পাতে নুন চাইলে বিদেশ থেকে আমদানি করা নুন চড়া দামে কিনে খেতে হবে আপামর ভারতবাসীকে।
তাই বুঝি তাবড় তাবড় এলিট নেতাদের বিষম খাইয়ে লবণ সত্যাগ্রহ হয়ে উঠল সাধারণ মানুষের নাগরিক আইন অমান্য অহিংস আন্দোলন! আচ্ছা, তাহলে গান্ধীজির হাত ধরে নুনের আন্দোলন ফিরে এলো বাংলায়? নুনের আঁতুড়ঘর কাঁথিতে এবারে সত্যাগ্রহ জন্মাল? বঙ্গের সব চাষিদের অভিমুখ তখন কাঁথির দিকে। দলে দলে মানুষ এসে উপস্থিত হলেন ছোট্ট গ্রাম নিমদাসবাড়ে। কাঁথি আর দীঘার মধ্যে এই গ্রাম। এখানে দিঘা, তমলুক এমনকি সুদূর কুমিল্লা থেকে আসা যে বাঙালিরা বটগাছের তলায় লবণ তৈরির ঘাটি গেড়ে বসবেন, তাঁদের লাঠি, বুট, বন্দুক দিয়ে দাবিয়ে রাখা সহজ হবে না। দানবীয় অত্যাচারের মুখে শাসকের চোখে চোখ রেখে পদ্মরানি, ধীরেন বালা দাসীরা বলবেন, পিছাবনি।
জান্তব অত্যাচার? অহিংস নাগরিক আন্দোলনের ওপর?
যে কোনও আন্দোলনই শাসকের পৃষ্ঠব্রণ। নাগরিক জিনিসটাই রাজশক্তির কাছে গোদ, আন্দোলন হলো তার ওপরে বিষফোঁড়া। তার ওপরে আবার কোন দেশের নাগরিক? পরাধীন দেশের। কেমন নাগরিক? তাঁদের প্রোফাইল?শিক্ষিত অশিক্ষিত, চাষি অধ্যাপক মজুর ডাক্তার সব মেলানো। এ যদি ইংরেজ শাসকের কাছে বিপজ্জনক না হয় তবে উপনিবেশটাই তো হাত থেকে বেরিয়ে যাবে!
তাই শাসকের মুঠো হল দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর, আর ওদিকে নুনের ঘাঁটি এক থেকে বেড়ে হলো একশো। মহকুমা জেলে তিলধারণের ঠাঁই নেই। দ্রোহের নতুন স্লোগানে গর্জে উঠছে বাংলা - পিছাবনি। ম্যাজিস্ট্রেট পেডি নিজে দাড়িয়ে থেকে হাজার হাজার মানুষের ওপর লাঠি, বুট চালাবার হুকুম দিল, পদ্মরানীর মতন বেয়াড়া মেয়েদের বিবস্ত্র করে তাদের গায়ে থুথু দিল অথচ সত্যাগ্রহীদের উপযুক্ত ব্যবস্থা কিসে হয় কিনারা করতে পারলেন না। পরে এই পেডির ব্যবস্থা অবশ্য করে ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবীরা।
সে কথায় ফিরছি, আগে ১৯৩০ সালের একটা ছোট সময় সারণী দিয়ে দিই, যাকে বলে আপ ক্রোনোলজি সমঝ লিজিয়ে।
বারোই মার্চ থেকে পাঁচই এপ্রিল ডান্ডি মার্চ। তার ঠিক পনের দিন পর যখন ভারতের উপকূলবর্তী গ্রামে শহরে মহোৎসাহে চলছে দিশি লবণ তৈরির যজ্ঞ, তখন, আঠেরই এপ্রিল।গুড ফ্রাইডে। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠ করলেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি। বাষট্টি জন বিপ্লবীর নেতৃত্বে দখল হল চট্টগ্রাম শহর, উড়ল স্বাধীনতার পতাকা। স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে কথা বলছি না আমরা? এ স্বাদ সবার আগে জেনেছিলেন মাস্টারদা, জেনেছিলেন অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, লোকনাথ বল, মনোরঞ্জন নস্কর। জেনেছিলেন চোদ্দো বছরের টেগরা বল। হরিগোপাল বল, দলের আদরের টেগরা, বাইশে এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়েও বলে গেলেন---"আমি চললুম। তোমরা থেমো না, শেষ না দেখে ছেড়ো না"।
স্বাধীনতা। সে অমৃতের আহ্বান এমনই সৃষ্টিছাড়া। প্রাণের মায়াও ভুলিয়ে দেয়।
১৯৩০ সাল - রক্তের মতন নোনা। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠের পর একের পর এক ধর পাকড় সংঘর্ষ। ফেরার মাস্টারদার মাথার খোঁজে অকথ্য অত্যাচার। সঙ্গে লবণ সত্যাগ্রহীদের হেনস্থা। অহিংস আন্দোলন আর সহিংস বিপ্লবের সমান্তরাল পথ মিলে গেল শেষে ইংরেজ শাসকের জেল কুঠুরিতে। সত্যাগ্রহ আন্দোলন ব্রিটিশ শাসকের দাঁত নখ বার করে ফেলেছিল। চট্টগ্রামের পর মরিয়া শাসক সর্বশক্তি দিয়ে দমন অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ল। চন্দননগরে বিপ্লবীদের সেফ হাউস, শশধর মুখার্জির বাড়ি, অচিরেই শাসকের নজরে এলো।
1st September 1930। কলকাতার পুলিশ কমিশনার টেগার্ট খবর পেল সুভাস বোসের মত দেখতে একটা ছোকরা চন্দননগরে লুকিয়ে আছে। সুভাস চন্দ্র বসু তখন আলিপুর জেলে, টেগার্টের নজরবন্দি। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির অন্যতম মাথা লোকনাথ বলকে লোকে সুভাস বোসের ভাই বলে ভুল করত। টেগার্টের সে ভুল হল না। রাত সাড়ে এগারোটায় লালবাজারে কুড়িজন সার্জেন্ট তলব পেয়ে হাজির। সবাই ইওরোপীয়ান। পায়ে টেনিস শু। হাতে টর্চ আর রিভলভার নিয়ে ফোর্স চড়াও হলো চন্দননগর। শশধর মুখার্জির স্ত্রী সেজে সেই গোপন ডেরায় ছিলেন বিপ্লবী সুহাসিনী গাঙ্গুলি। টেগার্ট নিজে তাঁকে থাপ্পড়ের পর থাপ্পড় মেরে আধমরা করে দিয়েছিল। গণেশ ঘোষের মুখ বুট দিয়ে দলেছিল শিক্ষিত ফোর্স। লোকনাথের পাঁজর ফাটিয়েছিল লাথি মেরে। সুহাসিনী দেবীকে মেরে মেরে টেগার্টের হাত টনটনিয়ে উঠল, কিন্তু একজন বিপ্লবীও মুখ খুললেন না।
স্বাধীনতার স্বাদের মর্ম বোঝে থাপ্পড়, লাথি, গুলি? চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠের সেনানায়ক, কালারপোল যুদ্ধের বীর শহীদ মনোরঞ্জন নস্কর তাঁর হতদরিদ্র বাবাকে ত্যাগ দিয়েছিলেন। কেন? কারণ পেটের জ্বালায় তাঁর বাবা ছেলেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুলিশের ইনফর্মার হবার।
কালারপোল যুদ্ধের পরে মনোরঞ্জন তখন শহীদ হয়েছেন। ঘরে ঘরে পুলিশ ফোর্স ঢুকে ভাঙচুর করাটা চট্টগ্রামে তখন নিত্যদিনের ঘটনা। একদিন এক কুঁড়েঘরে রুখে দাঁড়ালেন এক শীর্ণ বৃদ্ধ। জিরজিরে শরীর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুলিশের বুটের ওপর। একটি মাত্র লাথির আঘাত যথেষ্ট ছিলো অপুষ্ট বৃদ্ধের হৃদযন্ত্র স্তব্ধ করে দেবার জন্য। বীর শহীদ মনোরঞ্জন যদি জানতেন, তাঁর বিপ্লব বিরোধী দিন আনা দিন খাওয়া বাবাও শেষে বেইমানির ভাতের বদলে পুলিশের বুটের লাথি বেছে নিয়েছিলেন!
যে সব পুলিশ অফিসার অত্যাচারের জন্য রাতারাতি কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল তার মধ্যে অন্যতম, ঢাকার ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যান। 29th August 1930. ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে খুন হয়ে গেল Loman. সঙ্গে গুলির আঘাতে মারাত্মক আহত হল ঢাকার Superintendent of Police Hudson. হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাধানোর মেশিনারি ছিল হাডসনের হাতের মুঠোয়। তা বেঙ্গল পুলিশের এই দুই রত্নকে দিনে দুপুরে গুলি করলেন কে? ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট, বিনয় বসু।
বিনয় বসু। ইনিই আমাদের বিনয় বাদল দীনেশের বিনয়। হু। লবণ সত্যাগ্রহের বসন্তে রামধুন দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। অচিরেই দেশের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়েছে বিপজ্জনক সব স্লোগান। দেশ জাগছে এক অন্য বসন্তের গুঞ্জনে:
सरफ़रोशी की तमन्ना, अब हमारे दिल में है, देखना है ज़ोर कितना, बाज़ु-ए-कातिल में है
ऐ शहीदे-मुल्को-मिल्लत मैं तेरे ऊपर निसार
अब तेरी हिम्मत का चर्चा ग़ैर की महफिल में है।
অক্টোবর ১৯৩০। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার প্রহসন শেষে মৃত্যদণ্ডে দন্ডিত হয়েছেন ভগৎ সিং, শুকদেব থাপার, শিবরাম রাজগুরু। এহেন বছরের বিদায়মাসে আরও রক্ত ঝরল। রাইটার্স অভিযানের অলিন্দযুদ্ধের রক্ত। পটাশিয়াম সায়নাইড কতটা ক্ষার স্বাদের, সে কথা আমাদের বাদল গুপ্ত কাউকে জানতে দেননি।
বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত। সাল ১৯৩০, ৮ই ডিসেম্বর। নিউ পার্ক স্ট্রিটে বিপ্লবী নিকুঞ্জ সেনের বাড়িতে সাজো সাজো রব। বাদল আর দীনেশ দুজনে ভোরবেলা খাবার কম্পিটিশন দিচ্ছেন, মাংসের ডেকচি শেষ করছেন, আর তেড়ে ইয়ারকি মারছেন। ঝানু বিপ্লবী নিকুঞ্জ সেন চোখের জল লুকিয়ে পারেন না। ওদিকে মেটিয়াবুরুজের বাড়িতে বিনয় বসুকে থালা ভরে খাওয়াতে বসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলছেন রাজেন গুহর স্ত্রী সরযূ দেবী। স্বাধীনতার স্বাদ বুঝি চোখের জলের মতন! এই তিনজন, পাক্কা সাহেবি কোট প্যান্ট পরে যখন বেলা বারোটায় রাইটার্সে ঢুকেছিলেন কেউ আঁচ করতেই পারেনি কি হতে চলেছে। I.G of Prisons এর অফিসে ঢুকে সিম্পসনের ওপর ছ'টা ফায়ার করেন তিনজন। বিনয় বাদল দীনেশ। সিম্পসন অবাক হবার সুযোগটুকু পায়নি, শরীর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। গুলির আওয়াজ, কাচভাঙ্গার শব্দ, আতঙ্কিত আমলা কর্মচারীদের আর্তনাদ ছাপিয়ে গমগম করে উঠেছিল রাইটার্সের অলিন্দ একটিই মন্ত্রে – বন্দে মাতরম।
বন্দে মাতরম বলে নাচো রে সকলে কৃপাণ লইয়া হাতে দেখুক বিদেশি কাঁপুক মেদিনি ভীম পদাঘাতে
১৯৩০ সাল ব্রিটিশ শাসকের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের টেনে দাঁড় করিয়েছিল খাদের সামনে। ততদিনে জানা গিয়েছে দীনেশ গুপ্ত দীর্ঘদিন সংগঠনের কাজ করেছেন মেদিনীপুরের বুকে। মেদিনীপুরের কুখ্যাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডির মাথার বোঝা লাঘব করতে এগিয়ে এলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের অমর সন্তান যতিজীবন ঘোষ আর বিমল দাশগুপ্ত। কাছ থেকে তলপেটে ছ খানা ফায়ার করে পেডিকে হত্যা করলেন দুই তরুণ। ফেরার হয়ে আত্মগোপন করতে কলকাতায় চলে আসেন বিমল দাশগুপ্ত।
তখন কলকাতার কমিশনার টেগার্ট। তার নেটওয়ার্ক ভয়ানক নিশ্ছিদ্র। বিমল দাশগুপ্ত যাতে ধরা না পড়েন, সেই ব্যবস্থাও হলো। বিমল দাশগুপ্তের মাথা থেকে গোয়েন্দা বাহিনীর নজর সরাতে কানাই ভট্টাচার্য অ্যাকশনে নামলেন।
দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারপতি গার্লিক। প্রত্যুত্তর এলো বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কানাই ভট্টাচার্যের পিস্তল থেকে। আলিপুরে ভরা এজলাসে গার্লিককে গুলি করলেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে সায়নাইড খেয়ে শহীদ হলেন কানাই ভট্টাচার্য। চিরকুটে লিখে গেলেন, আমি বিমল দাশগুপ্ত, দীনেশ গুপ্তকে হত্যার অপরাধে গার্লিককে মৃত্যুদণ্ড দিলাম।
আর বিমল দাশগুপ্ত? যাঁকে আগলে রাখতে নিজের শহীদ পরিচয়টা অবধি দান করে গেলেন কানাই ভট্টাচার্য? কী হলো তাঁর? এর জন্য আমাদের ফিরতে হবে হিজলিতে।
মেদিনীপুরের হিজলি? সেই যে, লবণ সত্যাগ্রহে তুমুল কাণ্ড চলছিল যেখানে?
মেদিনীপুরের হিজলি। সেখানে জেলে ঠাঁই ধরে না এত ভিড়। ষোলোই সেপ্টেম্বর, ১৯৩১ সাল। হিজলী ডিটেনশন ক্যাম্প। বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ দুয়েক রাজবন্দী আটক রয়েছেন। টাটকা গার্লিক হত্যার শোধ নিতে বন্দীদের ওপরে প্রথমে লাঠিচার্জ তারপর ওপেন ফায়ার শুরু করল ব্রিটিশ বাহিনী। ঊনত্রিশ রাউন্ড গুলি চলার পর পড়ে রইলেন শতাধিক আহত বন্দী, আর দুটি শহীদের লাশ। তারকেশ্বর সেনগুপ্ত আর সন্তোষ মিত্র। সত্যাগ্রহ থেকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠ - নেটিভ ইন্ডিয়ানদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাজা বুক পেতে নিলেন দুই শহীদ।
একেবারে নাৎসি বাহিনীর মতো অত্যাচার! নিরস্ত্র বন্দিদের বিনা প্ররোচনায় গুলি! সভ্য ব্রিটিশ ইম্পিরিয়ালিজম কি বর্বর নাৎসি ফ্যাসিজমকে পথ দেখিয়েছিল? সে থিওরি বরং পণ্ডিতদের জন্য তোলা থাক। হিজলি জেলের এই বীভৎস কাণ্ডে তৈরী হলো ইতিহাসের নতুন মোড়। বেঙ্গল কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। কলকাতার মনুমেন্টের নীচে ধিক্কার সভায় এলেন রবীন্দ্রনাথ। দেশজুড়ে ছিছিক্কার পড়ে গেল।গোলমাল দেখে এই নারকীয় ঘটনার সরকারি তদন্ত হলো। ঝটপট রিপোর্টও এসে গেল।
লাটসাহেব সব দেখেশুনে বলল গুলি চালানোর জন্য রাজবন্দীরাই দায়ী। ইউরোপীয়ান অ্যাসোসিয়েশন আবার গলা বাড়িয়ে বলল বিপ্লবী সন্দেহ হলেই গুলি করা হোক, নইলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর উত্তর না দিয়ে পারে? ২৯ শে অক্টোবর ১৯৩১। হিজলির সেই রাতের মাস খানেক পর। ইউরোপীয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভিলিয়ার্সকে গুলি করে মারাত্মক আহত করলেন - কে? কুখ্যাত পেডিকে শিকার করেছিলেন যিনি, সেই বিমল দাশগুপ্ত। আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “এই বণিকসভার ওস্কানিতেই মেদিনীপুরে সত্যাগ্রহীদের ওপরে এত অত্যাচার চলেছে। চট্টগ্রাম, হিজলী ক্যাম্প – বর্বরতার সীমা ছড়িয়ে গেছে প্রশাসন, এই ইউরোপীয়ান অ্যাসোসিয়েশনকে তুষ্ট করতে। আমি তাই হিসেব বরাবর করলাম। I came here to settle accounts”
ও আমার জন্মভূমি, ও আমার মাতৃভূমি সঁপেছি তোমায় প্রান তুমি বেদ, তুমি কোরআন, তুমি আল্লাহ ভগবান সঁপেছি তোমায় প্রান
মিনিবাস বলতে আমরা বুঝি বি বা দি বাগ। এদিকে নেতাজি ভবন আর নেতাজি - দু দুটো মেট্রো স্টেশন। প্লাটফর্ম ডান দিকে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে দুর্গাপুজোর নতুন থিম না জানলে শারদীয়ার কাউন্ট ডাউন শুরু হয় না। হিজলী ডিটেনশন ক্যাম্প এখন খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাস। সেই অন্ধকার রাতের স্মারক সংরক্ষণ করে রাখা আছে ক্যাম্পাসের মধ্যে। আমাদের অকিঞ্চন সীমিত ইতিহাসজ্ঞান শুধু পদ্মরানি, ধীরেনবালাদের বিশেষ জায়গা দিতে পারে নি।
বিমল দাশগুপ্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলি, টেগরা, কানাই ভটচাজরাও হারিয়ে গেছেন স্মৃতির অতলে। মলঙ্গি বিদ্রোহীদের নাম পাবেন হাতে গোনা পরীক্ষার সিলেবাসের পাতায়। বাপুজির ছবি যেমন আছে পকেটের ক্যাশে।
শুধু এক্সটেন্ডেড উইকেন্ডে যদি চলেই যান দিঘা বা মন্দারমণি? এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর বেয়াড়া ইচ্ছে থাকলে কাঁথির সাত কিলোমিটার দক্ষিণে আজও দেখতে পাবেন দাড়িয়ে আছে এক ছোটো জিদ্দি গ্রাম। কোনও কালে তার নাম ছিলো নিমদাসবাড়। এখন? এখন তার নাম পিছাবনি। সদর্পে সে আজও ডিগ্রিহীন কৌলীন্যহীন গ্রাম্য উচ্চারণে একরোখা হয়ে বলছে - পিছাবনি। হারিয়ে যাওয়া আমাদের দেশের ইতিহাস আজও সমুদ্র ছাপিয়ে গর্জে উঠছে। পিছাবনি। পিছাবনি। স্বাধীনতা থেকে পিছাবনি। আমরা শুনি, ছাই নাই বা শুনি। তাহলে আজ এই অবধিই থাক রসমঙ্গল? আমাদের না পিছানোর স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাক, এটুকুই আশা। আমরা মনে রাখি অন্নের সুষম বন্টনেই মঙ্গল।
প্রকৃত রসমঙ্গল।
ধাঁধা
আহা মরি মরি লাজে পাছে গলে যায় শাকম্ভরীর কৃপায় সে পাঁচ প্রকার হয় বিট হাসে পর্বত হাসে গাহে সোবর্চল সিন্ধু ওষধি দেখি কোম্পানি হইল অচল
তথ্যসূত্র
বই
- যোগেশচন্দ্র বসু. মেদিনীপুরের ইতিহাস
- Lewis Sydney Steward O'Malley. Bengal District Gazetteers Midnapore
- নগেন্দ্রনাথ রায়. বৃটিশ আমলে মেদিনীপুরের লবনশিল্প ও মলঙ্গ শ্রমিক বিদ্রোহ
- শ্রী শৈলেশ দে. আমি সুভাষ বলছি
- Mahatma Gandhi. The Story of My Experiments with Truth
- Michael Silvestri. Policing ‘Bengali Terrorism’ in India and the World | Imperial Intelligence and Revolutionary Nationalism, 1905-1939 | Britain and the World (BAW)
- অনন্ত লাল সিংহ. চট্টগ্রামের যুব-বিদ্রোহ
- অনন্ত লাল সিংহ. অগ্নিগর্ভ চট্টগ্রাম