ভাষ্য
At the stroke of the midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom.
পনেরই আগস্ট, ১৯৪৭, মধ্যরাত্রি। পৃথিবীর মানচিত্রে উদয় হল এক স্বাধীন দেশ, ভারতবর্ষ।
স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বক্তৃতাটি দিয়ে জওহরলাল নেহরু উপস্থিত সবাইকে মতিচুরের লাড্ডু বিতরণ করে খাইয়েছিলেন। স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ- মিঠে না হয়ে যায় না। তিনি কি জয় হিন্দ সন্দেশের স্বাদ জানতেন? বা জয় হিন্দ বরফি? নিদেন পক্ষে নেহরু সন্দেশ?
স্বাধীনতার আসল স্বাদ জানবেন তাঁরাই যাঁদের দিন কেটেছে পরাধীন ভারতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে। আর আমরা? উত্তরাধিকারে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা কেমনকরে স্বাদ বদল করেছে দুশো বছরের উপনিবেশের পথে? দেশের কথা তাহলে শুরু হোক সন্দেশ দিয়ে?
উনিশশো আঠাশ সাল। অগ্নিযুগ। অমৃতের পুত্র কন্যারা দেশের মাটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্বদেশী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সুভাষ বোস প্রায় সময়ই জেল হেফাজতে কাটাচ্ছেন। মতিলাল নেহরু কলকাতায় এলেন জাতীয় কংগ্রেসের মিটিঙে। ভীমচন্দ্র
নাগ অভ্যর্থনা জানিয়ে বানিয়ে ফেললেন নেহরু সন্দেশ। ভাবুন, যে দোকানে একদিন লর্ড ক্যানিংয়ের বৌয়ের জন্মদিন সেলিব্রেট করতে বানানো হয়েছিল ভাজা ছানার মিষ্টি, যাকে দুনিয়া চেনে লেডিকেনি নামে, সেখানেই গোয়েন্দা পুলিশের চোখ কপালে তুলে স্বদেশী নেতার নামে সন্দেশ! বলাই বাহুল্য স্বদেশি আন্দোলনের তুমুল জোয়ারে নেহরু সন্দেশ বিক্রি হয়েছিল হট কেকের মতন।
ভাগ্যিস শাসকদের তখন আইটি সেল বা বয়কট গ্যাং ছিল না! আজ সে দোকানে গিয়ে নেহরু সন্দেশ নাই যদি বা পান, বাংলা সংখ্যায় লেখা ঘড়িতে সময়টা দেখে নিতে ভুলবেন না। যদি দেখেন সে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে গেছে আশি বছর ওপারে, তাহলে ঘাবড়াবেন না। কান পেতে শুনুন, পরাধীন বাংলার বুকে মার্চ করে যাচ্ছে গোরা সৈন্য পল্টন। জুড়িগাড়ি চেপে বাবু যাচ্ছেন হাওয়া খেতে, সঙ্গে নফর চলেছে বারকোশ ভর্তি ‘আবার খাবো’ নিয়ে। ঐ এগিয়ে আসছে একদল দামাল ছেলেপুলের মিছিল, আপনার নাকে ঘিয়ের সুবাস ভেসে আসবে সদ্য বসানো ভিয়েন থেকে। দেশের আকাশ বাতাস কাঁপছে তখন দশের চিৎকারে।
‘বন্দে-মাতরম্’। “ইংরেজ ভারত ছাড়ো”। দাঁড়ান, নড়বেন না। গোরা পল্টনের সঙ্গে মিছিলের ধস্তাধস্তি হচ্ছে হোক। আপনি লক্ষ্য রাখুন দোকানের উপচানো ভিড়ে। কী চাইছেন সবাই? জয় হিন্দ আওয়াজ উঠছে কেন ভিড় থেকে? এ স্লোগান যে নিষিদ্ধ!
আলবাত নিষিদ্ধ। লিফলেট, প্যামফ্লেট, স্লোগানেয়ারিং - সব কিছু নিষিদ্ধ করেছে মহামহিম সরকার, কিন্তু মিষ্টি? ওই যে বারকোশ ভর্তি মিষ্টি লোক হামলে পড়ে কিনছে, ওর নাম যে জয় হিন্দ সন্দেশ! তেরঙ্গা সন্দেশ! মিষ্টি তো আর নিজে স্লোগান দিতে পারে না - তার নামেই দ্রোহ। ও সন্দেশে কামড় বসালে শিউরে ওঠে স্বয়ং সরকার বাহাদুর। সুদূর বার্লিন থেকে সুভাষ বোস কোন পথের দাবী নিয়ে আসছেন? কোন কারাগারে কোন শৃঙ্খলে বাঁধা যায় মুক্তির স্বপ্ন? দ্রোহের চিৎকার? বেনারসের জয় হিন্দ বরফি থেকে বাংলার জয় হিন্দ সন্দেশ, আম আদমি আউরত বিলিতি শাসককে একটিই সন্দেশ, একটিই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেক হল, এবার ভারত ছাড়ো। তেরঙ্গা মিঠাই। বাইরে রোদ, ভেতরে আগুন, আর মাঝখানে—এক টুকরো স্বাধীনতা।
কাজেই সন্দেশের ভেতরে বিপ্লবীরা গোপন তথ্য আদান প্রদান করলে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই? মিঠাই আর বিপ্লবের সম্পর্ক আসলে বিশ্বাসের।
পরাধীন দেশে ক্লাবঘর ভাড়া করে প্ল্যানিং করবেন সে উপায় তো নেই। আছে মুশকিল আসান মিষ্টির দোকান। কলেজ স্ট্রিটে প্যারামাউন্টের উঠোন হোক কিংবা চট্টগ্রামের বোস ব্রাদার্স। ভালো মানুষের মতন দুটো সন্দেশ কি রসগোল্লা শালপাতার ঠোঙায় খেতে খেতে পাহাড়তলি ক্লাব আক্রমণের ব্লু প্রিন্ট ঝালাই করে নিতেই পারেন নির্মল সেন আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ফিমেল অ্যাকশন মাস্টারদার শেষ তুরুপের তাস, বিদেশি শাসককে বুঝিয়ে দিতে হবে জালিয়ানবাগের রক্তে ভেজা মাটির ঋণ তাদের শুধতে হবে, এ জন্মেই। ক্লাবে কোন সময়ে গেলে বিস্ফোরণের আঘাত হবে পারফেক্ট? প্রীতিলতা কি ঢাকা থেকে নিজে গিয়ে পটাশিয়াম সায়নাইড নিয়ে আসবেন? সঙ্গে কল্পনা দত্ত থাকলে কেমন হয়? পিস্তল কখানা হলে সবচেয়ে ভালো?
প্রকাশ্যে এমন গোপন মিটিং! জানাজানি হয়ে গেলে?
বোস ব্রাদার্সের মালিক শুধাংশু বিমল বোস নিজেই তো সশস্ত্র বিপ্লবী। মাস্টারদা সূর্য সেনের অনন্ত ভরসার ঠাঁই।কাজেই বিপ্লবীদের গোপন মিটিং চলছে যখন, তাঁদের সুরক্ষার জামিন হয়ে থাকছেন দোকানের মালিক, এবং কর্মচারীরা - নিজেদের ভবিষ্যৎ বাজি রেখে|কলকাতায়, চন্দননগরে, ঢাকায়, জেলায় শহরে একের পর এক মিষ্টির দোকানে চলছে পুলিশি ধরপাকড়। জয় হিন্দ সন্দেশ বানিয়ে গোয়েন্দাদের হিটলিস্টে নাম তুলে ফেলছেন মন্মথ দাস। তাতেও সংগ্রামীদের জেদ কমলো কই?
স্বাধীনতার জন্য, whatever it takes!
বাঙালির রসনা কুশলতা তাহলে বিপ্লবী আন্দোলনেও পিছিয়ে থাকেনি! শুধু বাঙালি কেন? খাবারের ভূমিকা স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বত্র| মানে সব লড়াই শেষ মেষ পেটের লড়াই গোছের আপ্ত বাক্য যদি ছেড়েও দিই, তবুও স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ যাত্রায় বার বার ফিল্ডে নেমেছে নানা রকম খাদ্য বস্তু| যেমন ধরুন রুটি| মানে রোটি কাপড়া আউর মকান নয় কিন্তু।
আমরা যে সময়ের কথা বলছি তার বুকে ভারতীয় সোশ্যালিজমের স্লোগান জন্মাতে তখনও একশ বছরেরও বেশি দেরি| গল্প টা শোনাই তবে?
সন তারিখ পরে বলছি| স্থান কানপুর| গ্রামের প্রান্তে জঙ্গল, কয়েক খানা ঘর আছে বটে, তবে বেশ দূরে দূরে| হঠাৎ ই একদিন, যেন জঙ্গল ফুঁড়ে বেরিয়ে এলেন একজন মানুষ| পরনে খেটো ধুতি, মাথায় ফেট্টি, নেহাতই গড়পড়তা চেহারা| হাতে একখানা রুটি| প্রায় ছুটতে ছুটতে তিনি ঢুকে গেলেন সোজা চৌকি র ভেতরে| চৌকিদারকে ডেকে এক নিঃশ্বাসে বললেন , “পাঁচটা রুটি বানিয়ে পাঁচ গ্রামে পাঠাও।”
মুখে কিছু না বলেই চৌকিদার মাথা নাড়লেন। কারা পাঠাল, কেন পাঠাল—জানার প্রয়োজন নেই। রুটিটা যেন স্রেফ আটার নয়, অলিখিত হুকুম। এক রুটি পাঁচ থেকে পঁচিশ থেকে একশো পঁচিশ হয়ে ছুটতে থাকে| চৌকি থেকে চৌকিতে| ফররুখাবাদ থেকে দিল্লি, কানপুর থেকে করাচি - প্রতিটি চৌকিতে এসে হাজির হচ্ছে একখানা রুটি| সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে অন্য চৌকি গুলো তে| বলা হয় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৯০ হাজার সেপাই জুড়ে যান এই অভূতপূর্ব রুটি অভিযানে| এক একটা রুটি নাকি ৩০০ মাইলের বেশি পথ ছুটেছিল! দ্রুততম বিলিতি মেলের চাইতেও দ্রুতগামী ছিল এই রুটি!
কোথাও কিছু লেখা নেই, কিন্তু কি যেন ঘুরছে রুটি গুলোর সঙ্গে, ছায়ার মতো| গ্রামের চৌকিদাররা, দেহাতি মানুষগুলো, নিয়ম মেনে পাঁচটা করে রুটি বানান, পাঁচ দিকে পাঠান। চক্রটা ভাঙেন না কেউ - ভয়? কুসংস্কার? কিন্তু ভয় তো ওই আধা ন্যাংটা অসভ্য মানুষ গুলোর পাওয়া উচিত, তা তো হচ্ছে না! কি এক অজানা ডাকে যেন রুটিগুলি ছুটে চলেছে। যেন নিঃশব্দে বলছে— "আর বেশি দেরি নেই।"
“এই রুটিতে কী আছে?” একজন বড় সাহেব জিজ্ঞেস করলো |
“আটা আর পদ্মবীজ,” ঠান্ডা উত্তর আসে।
রুটি গুলোর ওপরে কোনো চিহ্ন নেই, উল্টো পিঠেও না। সেনার বড় কর্তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে, ভেতরে কোনো কাগজের টুকরো, ছেঁড়া কাপড়, খড় কুটো কিছু আছে কিনা! কিছু পাওয়া যায় না| শুধু রুটি, শ'য়ে শ'য়ে, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে - ছুটে চলেছে দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে|
মার্চ ৫, ১৮৫৭। The Friend of India লেখে, “We are confused. And frightened.”
সাহেবরা টেবিলে বসে রুটির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছুরি-কাঁটা হাতে কাঁপে। ঘুম আসে না।
প্রতি গ্রামে, প্রতি চুল্লিতে, সেইবার আগুন যেন একটু বেশি জ্বলছিল। সেই আগুন প্রথম দাউ দাউ করে উঠলো মীরাট এ| ১০ই মে ১৮৫৭|
ইংরেজ দের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের প্রথম মহাবিদ্রোহ - সিপাহী বিদ্রোহ| এ আর চুল্লির ধিকি ধিকি আঁচ নয়, একেবারে দাবানল|
কিন্তু সেই রুটির কথা?
নিয়ম করে ইতিহাস ভুলে গেলো| কেউ জানল না কে শুরু করেছিল। কেন বা করেছিল। ভারতবর্ষের চাপাটি মুভমেন্ট থেকে গেল এক অসামান্য মন্ত্রগুপ্তির উদাহরণ হয়ে।
বিশেষজ্ঞরা এই আন্দোলনকে বৃহত্তম মনস্তাত্বিক যুদ্ধগুলো মধ্যে ধরেন, মানে যাকে বলে সাইকোলজিকাল ওয়ার ফেয়ার| শোনা যায় এই রুটি অভিযান শেষ হয়ে গেলেও দীর্ঘ দিন অবধি রুটি দেখলেই আতংকিত হয়ে উঠতেন অনেক ব্রিটিশ অফিসার, ছেড়ে দিয়েছিলেন রুটি খাওয়া! জন্মের মতো!
এ যেন রুটির ছদ্মবেশে বিদ্রোহের ইতিহাস| ভাবুন তো, নানাসাহেবের সেনা যখন জড়ো হচ্ছিল, টাটিয়া টোপি যখন মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাই পরখ করছেন কামানের জোর, তখন দূরে এক চাষি কাঁধে বস্তা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাতে আছে কেবল নিরীহ কিছু রুটি!
তবে শেষ রক্ষা হলো না যে!
তা না হোক, শুরু তো হলো! এক বিরাট জাতির শিরায় শিরায় টান পড়ল, নিঃশ্বাস হল ফিসফাস, ফিসফাস হলো হুঙ্কার - হুঁশিয়ার!!
'হো কমর বান্ধ তৈয়ার
ও লাখ কোটি ভাইয়োন
হুম ভুখ সে মরনে ওয়ালে
ক্যায়া মওত সে ডরনে ওয়ালে
আজাদী কা ডঙ্কা বজাও
উঠাও অগ্নি জ্বালাও
এ তো বুজদিলো কা হার, কভি নাহি করেঙ্গে স্বীকার
হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার।
তা হুঁশিয়ার হয়েছিল বটে দ্য গ্রেট ব্রিটেন - বিদ্রোহ দমনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুখ থুবড়ে পড়তে তড়িঘড়ি কোম্পানির কপালে মরণ কাঠি ছুঁইয়ে এইবারে মাঠে নামল খোদ ব্রিটিশ সরকার। ১৮৫৮ - The Government of India Act এর নিদানে আকারে প্রকারে নিজের দেশের প্রায় তেরো গুণ বড় ভারত ভূখণ্ড তে প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশ রাজ। আপনা হাত জগন্নাথ আর কি!
এবং একই সঙ্গে বিপুল আড়ম্বরে পর্দা সরল ভারতবর্ষের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের সবচাইতে কলঙ্কিত অধ্যায়ের - দ্বীপান্তর!
আন্দামানে সবে শুরু হচ্ছে বন্দর তৈরির কাজ। শ্রমিক চাই, বিনা মজুরির দন্ডিত আসামি হলে তো কথাই নেই।
কানপুর থেকে করাচি, বিদ্রোহী ঘাটি ঝেটিয়ে হাজারের বেশি বিদ্রোহী সেপাই কে কালাপানি পার করানো হল শিশুভুলানো কোর্ট ট্রায়ালের রসিকতার পর। শেকল পরিয়ে নগর বন্দর তৈরির কাজে জুতেও দেওয়া হলো। কিন্তু এইটুকুতে রাজ বাহাদুরের মন ওঠে? রাজদ্রোহের শাস্তি দিতে হলে চাই মজবুত জেলখানা। তৈরি হলো সেলুলার জেল। তার বন্দি খাতিরের বন্দোবস্ত হতেই হবে তাক লাগানো।
তাই দ্রোহীদের ডায়েট হলো দুই বেলা কচু সেদ্ধ। সাধে কি আর জেলের ভাত খাওয়াবো বলে এত সহজে থ্রেট দেওয়া যায়? সেলুলার জেলে ফিরছি, আগে একপাক ঘুরে আসা যাক মেনল্যান্ড থেকে। স্বাধীনতা আন্দোলনে এই জেলের ভাত কেমন বারবার আগুন জ্বালিয়েছে একটু বিশদে শোনা যাক।
ভাত বলছি বটে তবে বঙ্গদেশের জেলে মূলত বরাদ্দ হতো লপসি – ফ্যান মেশানো হলে সাদা, ডাল মেশানো হলে হলদে, আর গুড় মেশানো হলে লাল। স্বাদ বদলাতে, নাকি খোরাকি খরচ ম্যানেজ করার চক্করে জানা নেই, কোনো কোনও দিন জুটতো রেঙুন চালের ভাত, খানিকটা অড়হর ডাল, পাতা ও ডাঁটা সেদ্ধ, সঙ্গে তেঁতুল গোলা। কখনো কখনো ভাতের পাতে নিরুদ্দেশ হয়ে যেত ওই সামান্য তেঁতুল গোলা টুকুও, বা ডাঁটার ঘ্যাঁট বলতে পড়ে থাকতো শুধু শাকসবজির খোসা। এই সব খাবার দিনের পর দিন গিলতে হয়েছে তাঁদেরও যারা জন্মভূমি কে সকল দেশের রানী করার কসম খেয়েছিলেন!
কিন্তু ঢেঁকি কিনা স্বর্গে গেলো ধান ভানে,, আর তেমন তেমন ধান হলে স্বর্গ আপনি-ই নেমে আসে পৃথিবীতে। তাই অমন দুর্দশার মধ্যে থেকেও নজরুল ঠাট্টা করে কবিগুরুর গানের প্যারোডি বানিয়ে ফেলেন।
তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে, তুমি ধন্য ধন্য হে!
আমার এ গান তোমারই ধ্যন, তুমি ধন্য ধন্য হে॥
আ-কাঁড়া চালের অন্ন-লবণ,
করেছ আমার রসনা-লোভন,
বুড়ো ডাঁটা-ঘাঁটা লাপসী শোভন, তুমি ধন্য ধন্য হে ॥
২৬ শে september ১৯২২। তখন দুখুমিঞা মাত্র তেইশ। তখন দুখুমিঞা বারুদ। ধূমকেতু পত্রিকায় লিখলেন, ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ।অসুরের বদলে ডরিয়ে উঠল কিনা সিংহ হৃদয় ব্রিটিশ রাজ। কবি সাব্যস্ত হলেন রাজদ্রোহী।কবিতা লেখার অপরাধে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বসন্ত’ নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করলেন। খবর শুনে জেলের মধ্যেই নজরুল একেবারে মাতোয়ারা হয়ে উঠলেন। লিখে ফেললেন
'মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!'
এই উল্লাসের গুঁতো জেলর সাহেব সইতে পারল না। আলিপুর জেল থেকে হুগলি জেলে পাঠানো হল কোমরে দড়ি বেঁধে। জেলে ঢুকেই কবি চিৎকার করে গান ধরলেন, “দে গরুর গা ধুইয়ে।’
বিদ্রোহ বিষম ছোঁয়াচে বস্তু। হুগলি জেলের সুপার আর্সটন সাহেব তাই মন দিয়ে শুরু করল নতুন রাজবন্দীর যত্ন আত্তি। নতুন গয়না এল কবির, হাতকড়ার পরিবর্তে ডান্ডাবেড়ি, ভাতের পরিবর্তে নতুন পুষ্টিকর খাদ্য বরাদ্দ হল, ভাতের মাড়।
ততদিনে রবীন্দ্রনাথের ‘তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে’ গানটির প্যারডি করে ফেলেছেন নজরুল –“তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে, তুমি ধন্য ধন্য হে”। শিখিয়েও দিয়েছেন সহবন্দীদের। বিদ্রোহী কবি বলেছেন,
''হুগলি জেলে থাকাকালীন জেলের সকল প্রকার জুলুম আমাদের ওপর দিয়ে পরখ ক'রে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জেলের মূর্ত্তিমান 'জুলুম' বড়-কর্তাকে দেখে এই গান গেয়ে আমরা অভিনন্দন জানাতাম'।
উপনিবেশ শাসনে জেলের খাওয়া দাওয়া নিয়ে গল্পের ছড়াছড়ি। এই যেমন ১৯০৮ সালের ঘটনাটাই শোনা যাক! ঊনপঞ্চাশ জন বিপ্লবীকে হ্যারিসন রোড, মানিকতলা থেকে তুলে এনে এক লপ্তে গরাদের ভেতর পুরে বিচার চালাচ্ছে ব্রিটিশ সরকার, কিন্তু এক আধজন ছাড়া কেউ ভাঙল না!!
আগুন খোর ছেলেগুলো বরং জেলার সাহেবকে চেপে ধরল জেলের ভাতের অধিকারে। ভাতের জন্য লাগাতার প্রতিবাদ । সরকারি চিঁড়ে সোজা কথায় ভিজল না। শুরু হলো পর পর অসুস্থ হয়ে পড়ার ভড়ং। যেমন রোম তেমনই তো হবে তার রোমান জনতা! নানা অসুখের একেবারে মেলা বসে গেলো! কি নেই মাথা ঘুরছে, গা বমি, কান কটকট, এমন কি বাঁ চোখের পাতা তিন দিন ধরে নাচছে মানেই খুবই কঠিন রোগ হয়েছে সাহেব, জানে বাঁচব না বোধ হচ্ছে - এ ও বাদ যায়নি!
মন রে ছোবড় দড়ি পাকাও -
আর সকালবেলা লপসি খাও
মধ্যাহ্নে ভাতে তরকারী, অসিদ্ধ চিবাইয়ে মরি
এবার ডালেতে তেঁতুল যোগ করি
চোখ বুজিয়ে মুখেতে দাও
বৈকালেতে মৎসের ঝোল
মৎসহীন কাঁটার গণ্ডগোল।।
জেলার সাহেব শেষ মেশ হাল ছাড়তে বাধ্য হল! ছেলেগুলো গোঁয়ার, নাছোড়বান্দা। ওদিকে সি আর দাস সওয়াল জবাবে রোজ শিরোনাম তৈরি করছেন কোর্টে, এখন জেলর সাহেবের আর ব্রেকিং নিউজ হবার বিন্দুমাত্র এম্বিশন নেই। জেলের ভেতর থেকে সিস্টেমকে ঘষেমেজে পরিষ্কার করার ক্ষমতা যখন নেই, অন্তত বাইরে থেকে খাবার আসাটুকু অনুমোদন করে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সাহেব।
হ্যাঁ, শ্রোতা বন্ধুরা ঠিকই ধরেছেন, এঁরা ১৯০৮ সালে আলিপুরে বোমা মামলায় অভিযুক্ত সেই কিংবদন্তি রাজদ্রোহীর দল। ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের এক অনন্ত দুঃস্বপ্নের সূত্রপাত।
এখানে একটু বলি, ওই বাইরের খাবার ঢুকতে শুরু করলে সে এক কেমন বেজায় কান্ড ঘটলো। উপেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধায় তাঁর 'নির্বাসিতের আত্মকথা' বইতে ভারী রসিকতা করে বলেছেন - "সুশীল সেনের পিতা প্রায়ই আম, কাঁঠাল ও মিষ্টান্ন পাঠাইয়া দিতেন। কলিকাতার অনুশীলন সমিতির ছেলেরাও মাঝে মাঝে ঘি চাল, মসলা ও মাংস পাঠাইয়। দিত । সর্ববিদ্যাসিদ্ধ “হেমদা” সেগুলি হাসপাতালে লইয়া গিয়া পোলাও বানাইয়া আমাদের ভূরি-ভোজনের ব্যবস্থা করিয়া দিতেন। আম কাঠাল এত অধিক পরিমাণে আসিত যে খাইয়া শেষকরা দায় হইত, সুতরাং সেগুলি পরষ্পরের মুখে ওমাথায় মাখাইয়া সদ্ব্যবহার করা ভিন্ন উপাইয়ান্তর ছিলনা।"
শুনতে কেমন চড়ুইভাতির মতো আমোদ হয়, না? মনে হয় অতটাও হয়তো খারাপ ছিল না রাজবন্দীদের গারদ বাস।
তা তো বটেই, কারণ এই আমোদ প্রমোদের মধ্যেই নরেন্দ্র গোস্বামী রাজসাক্ষী হয়ে বসবে। এই বিশ্বাসঘাতকতার জবাব ফিরিয়ে দেবেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং কানাইলাল দত্ত। কোন ম্যাজিকে জেলের অলঙ্ঘ্য পাহারার মধ্যেও কানাইলাল পিস্তল জোগাড় করেছিলেন জানা নেই। অনুশীলন সমিতির মন্ত্রগুপ্তি বলে কথা। বরং চাউর হয়ে গেল স্বয়ং ক্ষুদিরাম বসুর আত্মা নাকি বিপ্লবী কানাইলালকে যুগিয়ে দিয়েছিলো পিস্তল যাতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্কে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিতে পারেন নরেন গোঁসাইকে।তারপর ফাঁসিঁকাঠে ঝুলবেন কানাইলাল দত্ত। দ্বীপান্তরের সাজা হবে বারীন ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, হেমচন্দ্র কানুনগো, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল সহ মোট পনের জনের। আরো সাত জনের হবে দীর্ঘ কারাবাস।
শুন সবে ভক্তিভাবে সংক্ষেপে প্রকাশি
অভিরামের হয় দ্বীপান্তর ক্ষুদিরামের ফাঁসী
ক্ষুদিরামের বয়স যখন উনিশ বৎসর
হাসি মুখে ফাঁসী গেল না হল কাতর
তাই তো বিনোদ বলে মনে দুঃখে
ভারতবাসী কান্দে শোকে
ভারতমাতা ভাসে নয়ন জলে…
একবার বিদায় দে’ মা ঘুরে আসি।।
এগারই আগস্ট ১৯০৮। হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরলেন উনিশ বছরের বীর ক্ষুদিরাম বসু। হঠাৎ করেই ব্রিটিশ রাজ ধড়মড় করে উঠে বসল। ক্ষুদিরামের শেষ যাত্রায় কত লোক! লোকে আবার গান ও বেঁধেছে? এই এত লোক জেগে উঠলে তো সর্বনাশ!
মহাবিদ্রোহের পর কত আয়োজন করতে হয়েছে রাজ বাহাদুরকে, নতুন নতুন আইন, নতুন নিষেধ, একটা সেলুলার জেল! সেসব কি বিফলে যেতে দেওয়া যায়?
ফিরব সেলুলার জেলে! কালাপানি পার। বীভৎসতার ঐতিহাসিক চেহারা। অত্যাচার সইতে না পেরে কেউ ঈশ্বরের দোহাই রেহাই চাইলে, ডেভিড ব্যারি, সেই সময়কার জেলার, আইরিশ, রোমান ক্যাথলিক - তার বাধা লব্জখানা আউরে দিতো, "এ জেলখানা আমার রাজ্য, এটা ভগবানের এলাকাভূক্ত নহে। ৩০ বৎসরে একদিনও এখানে ভগবানকে আসিতে দেখি নাই"। এই কথাটা ব্যারি সাহেব ন্যায্য বলেছিল। ভগবান যদি আসতেন, বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায় চৌধুরী কি ব্যারির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের পরনের কাপড় পেঁচিয়ে গলায় দড়ি দিতেন? দিতেন না।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এই god forsaken land এই চরম পরিস্থিতিও প্রাণের রস টুকু শুকিয়ে দিতে পারল না মুক্তিপথের অগ্রগামীদের।শারীরিক আর মানসিক অত্যাচারের কথা তো আর বলার কিছু নেই, আর খাবার বলতে সেই দুবেলা কেবল কচু সেদ্ধ। হাত পা যতই বাঁধ না কেন, মনের আগুন সহজে কি নেভে?
ওই ভয়ঙ্কর কারাগারের ভেতরে সুব্যবস্থার জন্য আন্দোলন শুরু করলেন বিপ্লবীরা। টানা ধর্মঘট।
এই ধর্মঘটের আঁচ পৌঁছলো মূল ভূখণ্ডেও। হাজার হাজার মানুষ সশব্দ প্রতিবাদে সামিল হলেন। অবস্হা হাতের বাইরে যায় দেখে খানিক বন্দোবস্ত বদলানো হয় সেলুলার জেলের রাজবন্দীদের।
খাবারের ক্ষেত্রেও কিছু শিথিল হয় শৃঙ্খল। তাঁরা নিজেরা রান্না করার অধিকার পান। দিনে দু ঘন্টার জন্য হেঁশেল হাতে পাবেন। দু ঘন্টার জন্য রসবতীর স্বাধীনতা।
হেমচন্দ্র কানুনগো ফ্রান্স ফেরত, বোমা বাঁধার ওস্তাদের হাতের পোলাও কালিয়া নাকি স্বাদগ্রন্হিতেও বিস্ফোরণ ঘটাত, তাই সকলে একরকম তাঁকে হেড শেফ ধরেই চলতেন।
তা একদিন বিপ্লবীদের হাত এল একখানি মোচা। বাঙালির ছেলে সব, ঘন্ট খেতে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। হেমচন্দ্র নবাবী খানার সমঝদার, মোচা নিয়ে তাঁকে ততটা ভরসা পেলেন না বিপ্লবীদের দল। বারীন ঘোষ বলেই বসলেন -“আমার দিদিমা হাটখোলার দত্ত বাড়ীর মেয়ে এবং পাকা রাঁধুনী, সুতরাং আমার মতই ঠিক”।
মোচা নিয়ে কনফারেন্স বসল, দীর্ঘ আলোচনার পর ফরাসী ডিপ্লোমা হাটখোলার হেঁশেল কে হারিয়ে দিল।
কিন্তু হেমচন্দ্র মোচা রান্না করতে যখন পেঁয়াজ ফোড়ন দিলেন, তখন বাকিরা প্রমাদ গুনলেন বটে কিন্তু ‘হয়ত এসব খুবই ফরাসী কান্ড’ বলে চেপে গেল।
শেষে খাবারটি নামল পাতে। এক অদ্ভুত দর্শন কালচে বস্তু, ঠিক যেন কালাপানি পেরোনো মোচার ফরাসী কাবাব! ঘন্ট নামে তাকে ডাকে এমন স্পর্ধা কার!
শোনা যায় মোচাতে হাত পাকিয়ে হেমচন্দ্র সুক্তোর দিকেও নাকি হাত বাড়িয়েছিলেন। সুক্তোর ফোড়ন নিয়ে বিরাট তর্কযুদ্ধ বাধায় তিনি নিদান দিয়েছিলেন যে কোন তরকারীতে ক্যুইনিন মেশালেই তা সুক্তো হয়ে যায়।
কে বলতে পারে ঐ ঘন্ট, সুক্তো, সুপারিন্টেন্ডেন্টের তাড়া খেয়েও জেলে ফলানো দুটো পুদিনা চারা, লঙ্কাগাছ,যত্নে বাড়িয়ে তোলা আরজালা বেগুন বা কুমড়োর চারা - এই সবকিছুর মধ্যে দামাল ছেলেগুলো খুঁজত তাদের বড় আদরের দেশের মাটি, মায়ের হাতের ছোঁয়া, যা সেই কোথায় যেন সরে গিয়েছে আবছা স্মৃতির মতো।
উপনিবেশ সামলাতে কম খরচ হয়, বলুন? তখনকার মূল্যে পাঁচ লক্ষ সাতের হাজার টাকা খরচ হয়েছিল জব্বর কালাপানির পেছনে।
তা সেসব উসুল করেছিল বটে সেল্যুলার জেল। ১৭ মে ১৯৩৩। ক্ষুদিরামের ফাঁসির পঁচিশ বছরের মাথায় অনশনকারী বিপ্লবী মহাবীর সিং রাঠোরকে জবরদস্তি টিউব ফিড করাতে যাচ্ছে প্রশাসন, আর সামান্য ভুল করে নল বেয়ে দুধ চলে যাচ্ছে সিধে মহাবীরের ফুসফুসে। সকালে বন্দিরা জানতে পারছেন লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় দণ্ডিত মহাবীর, ভগৎ সিংহের দোস্ত মহাবীর আর নেই। এর পাঁচ বছর পর সেলুলার জেল বন্ধ করার দাবী নিয়ে আন্দোলনে নামবেন মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তীব্র জনমতে সরকার বাধ্য হবে জেল খালি করতে। তার দু বছরের মধ্যে অক্ষশক্তি এসে থানা গাড়বে আন্দামানের বুকে। সেলুলার জেলে ঠাঁই হবে কাদের? না ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দীদের। ইতিহাস কি নির্মম, তাই না? কখন যে শিকারি নিজেই শিকার হয়ে যায়! যুদ্ধ যুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ! ওই আসছে আজাদ হিন্দ ফৌজ। সবুজ দ্বীপে স্বাধীন ভারতের পতাকা ওড়াচ্ছেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।
Subhash ji
Subhash ji
wo jaan e hind aa gaye
hai naaz jis pe hind ko
wo shaan e hind aa gaye
wo aan e hind laayenge
wo shaan e hind laayenge
phirangiyon ki qaum par
wo qahar ban ke chhayenge
কত প্রাণ ঝরেছে, কত আগুন জ্বলেছে, আজও জ্বলছে। স্বাধীনতা অর্জনের সে উত্তাপ যতদিন আছে, ততদিন আমরা আছি।
তাহলে আজ এই অবধিই থাক রসমঙ্গল? আমাদের অন্ন বস্ত্র মাটির স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাক, এটুকুই আশা। আমরা মনে রাখি অন্নের সুষম বন্টনেই মঙ্গল।
প্রকৃত রসমঙ্গল।
ধাঁধা
হারাইলে তাহার মর্ম বুঝিল জনগণ
মধ্যরাতে সূর্য উদিল নমিয়া যাহার চরণ
তথ্যসূত্র
বই
- উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়. নির্বাসিতের আত্মকথা
- শিবরাম চক্রবর্তী. ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা
- শৈলেশ দে. আমি সুভাষ বলছি
প্রবন্ধ
- অমিত রায়. ইন্দুভূষণের আত্মহত্যা এবং উল্লাসকরের উন্মাদগ্রস্ততা. 2021-03-14
- They Dedicated Everything For The Motherland. New India Samarchar. 2022
- বিশ্বজিৎ রায়. চর্ব্যচূষ্যলেহ্যপেয়: পর্ব ১- লপসি ও লপ্সিকার জন্য বিপ্লব. 2022-04-02
- Cellular Jail, Andaman Islands. World Heritage Convention, Unesco. 2014-04-15
- Rajyasree Sen. Chapatis to barfis, the foods that played a role in India’s Independence movement. 2024-09-19