ভূমিকা
এডগার অ্যালান পো’র ছোটগল্প “The Tell-Tale Heart” একটি বিখ্যাত সাইকোলজিক্যাল হরর থ্রিলার। এই কালজয়ী গল্প যদি নেমে আসে লকডাউনের বেকারত্ব নিয়ে অবসাদে ভোগা চেনা মানুষের অচেনা হিংস্র আচরণে, যদি একলা থাকা বৃদ্ধাকে সহজে ডাইনী বলে দাগিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কেমন হতে পারত? সেই অনুমানে নির্মিত ভয়ের শ্রুতিনাটক হৃদমাঝারে। নাটকের কিছু সংলাপ রইল এখানে।
নির্বাচিত চিত্রনাট্য
গান
তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দিব না
বুড়ি
অ গৌর, গৌর আমার। কোথায় গেলি রে? বড় শীত লাগে গৌর। তা ঘুমালি নাকি বাছা? অ গৌর। শুয়ে পড়লি?
কথক
বুড়ি আবার ডাকছে। ধোর, ডেটা প্যাকও শেষ। ডবকা মালটার ভিডিও দেখছিলাম, এখন ঘুরেই যাচ্ছে, ঘুরেই যাচ্ছে। ও ডাইনী বুড়ি নজর দিয়েছে শিওর। ধ্যার, মরেও না বুড়ি।
বুড়ি
অ গৌর, গোপাল আমার! ঘুমালি বাছা?
কথক
কী? ব্যাপারটা কী? ক্যাঁক ক্যাঁক করে চেল্লাচ্ছ কেন বুড়ি? তোমার পেয়ারের গৌর বেঁচে নেই, কোনকালে মরে হেজে গেছে। যত ভীমরতি।
বুড়ি
অ্যাঁ? অ মানিক, জানলাটা বন্ধ করে দে না বাছা। খটখট শব্দ হয়, আমার তরাস লাগে।
কথক
অ্যাহ, নাকি তরাস লাগে। কিসের এত ভয় তোমার?
বুড়ি
ও মা, খাটের নীচে আমার গয়নার পুঁটুলি আছে, যদি - যদি চোর ডাকাতে নিয়ে যায়?
কথক
তোমার গয়না কে ছোঁবে? চোর ডাকাতেরও প্রাণের মায়া আছে। তোমার মত অপয়া লোকের নজর পড়লে তাকে আর ঐ সোনাদানা ভোগে লাগাতে হবে না। ক্কী - কি হল? অ-অমন করে ড্যাবড্যাব করে কী দেখছ, অ্যাঁ?
বুড়ি
তোর বৌকে আমার হারটা দেব। একটা হার আছে আমার, বুঝলি?
কথক
রাখো তোমার হার। এই যে, জানলা বন্ধ, এবারে হয়েছে তো? চুপচাপ শুয়ে পড় এবার, আমাকে রেহাই দাও।
বুড়ি
অ গৌর, ছেড়ে দিব না। তোমায় হৃদমাঝারে রাখিব - (ফেড আউট)
কথক
বুড়ি একেবারে শকুন-চোখ দিয়ে দেখছিল। সালা, আমার না কিছু হয়ে যায়। বহুত পাপ করেছিলাম আর জন্মে, তাই এমন ফেঁসে গেছি। সালার লকডাউনে সেই যে চাকরিটা চলে গেল, আর কিছু লাগছেই না। বাড়িভাড়া বাঁচানোর চক্করে এই অপয়া বুড়িটার খপ্পরে পড়লাম, আর চাকরি হয়? গ্রামে ফিরব তার তো আর উপায়ও নেই, রূপাবৌদির সঙ্গে কেস করে এসেছিলাম, আমায় দেখতে পেলে পুঁতে রেখে দেবে।
উফফ, কেন যে মরতে এই বুড়িটার আস্তানায় এলাম। দুবেলা ডালভাত খেতে পাই, বদলে ও বুড়ি শকুন-চোখ দিয়ে আমার রক্ত চুষে খায়, আমি দিব্যি বুঝতে পারি। ডাইনী, ডাইনী। বুড়ি পাক্কা ডাইনী আছে।
হার! আমার বৌকে নাকি হার দেবে। ওর গয়না কে ছোঁবে? আচ্ছা, ওর একটা চোখ ওরকম কটা আর ঘোলাটে, কেন? ছোটবেলায় গল্প শুনেছি, ডাইনীদের এরকম হয়। বুড়ি সত্যিই ডাইনী?
(রিংটোন)
হ্যালো, হ্যালো। হ্যাঁ, আপনাকে কল করেছিলাম স্যার। আপনি বলেছিলেন একটা কাজ দেবেন স্যার, তাই - অ্যাঁ? লোক পেয়ে গেছেন? হ্যাঁ? আপনার চেনা লোক? ও আচ্ছা। আমার তাহলে, হল না? স্যার, বাইকটা তো চালাতে পারি না, নইলে ডেলিভারির কাজটা - হ্যালো? একটু - একটু দেখবেন স্যার। হ্যালো?
সালা এই কাজটাও ভোগে গেল। জানতাম। বারের ঠাকুরের পুজো দিলাম, মাদুলি নিলাম, তাতেও হল না। ঐ ডাইনীর শয়তান চোখে পড়েছি, আর আমার কি হবে? কি হবে! আ-আমি বাঁচব তো?
বুড়ি - বুড়িটাকে যদি ম্-মেরে ফেলি? অ্যাঁ? ডাইনী মরলে আমার ওপর আর নজর দিতে পারবে না, হ্যাঁ? আর - আর, ডাইনী বুড়ি মরে গেলে তখন ঐ সোনা গয়নায় দোষ কী? এই বাড়িতে দোষ কী? অ্যাঁ?
তাহলে? বুড়িটাকে মেরে ফেলি?
দেখি, কী করছে। ঘুমিয়েছে ডাইনীটা? দেখি?
ঝিমোচ্ছে না ঘুমোচ্ছে?
(দরজার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ)
বুড়ি
কে? কে? ও কি শব্দ হয়? অ গৌর! ও গোপাল!
কথক
বুড়ি জেগে আছে? এখন না। ওয়েট করি।
বুড়ি
কি শব্দ হল যেন? ইঁদুর টিঁদুর হবে। গোপালের জন্য মোয়া রেখেছি তক্তোপোশের নীচে, ইঁদুরে না খেয়ে নেয়।
কথক
কি বিড়বিড় করছে? যাব? বুড়ি যদি দেখে ফেলে?
বুড়ি
অ গৌর রে। তোমায় হৃদ-মাঝারে রাখিব, ছেড়ে দিব না। তোমায় হৃদ্-মাঝারে রাখিব। ছেড়ে দিব না। আমার যে আর কেউ নেই রে গৌর। তরাস লাগে। ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর তো পাব না, ছেড়ে দিব না।
কথক
এই তো, টর্চটা দেখি, হ্যাঁ। ঐ ডাইনী চোখটায় সোজা টর্চ মারব, বুড়ি আমাকে দেখতেই পাবে না।
বুড়ি
তোমায় হৃদ-মাঝারে রাখিব - আআআহ আহ, ও মা গো!