কথকতার ছলে জীবনের গল্প বলে মেয়েদের দল Mad Balikas
বিষকন্যা
সিরিজ: ইতিহাস কথা কয় | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত: 05 নভেম্বর 2022 | সময়কাল: 1 ঘন্টা 30 মিনিট 21 সেকেন্ড
চরিত্রলিপি:
  • উল্কা | জয়িতা ভট্টাচার্য
  • শিবমিশ্র | শ্রেয়া লাহিড়ী
  • বটুকভট্ট | সোমা দে
  • চণ্ড এবং সেনজিত | পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
  • অন্যান্য ভূমিকায় | অমৃতা মুখার্জি, অয়ন্তিকা দাস মণ্ডল, অর্পিতা মুখার্জি, প্রমিতি গণ, সুস্মিতা দাস
  • সূত্রধর | প্রিয়াঙ্কা দাস কানুনগো
গান: তৃণা চক্রবর্তী, শ্রীপর্ণা চ্যাটার্জি

ভূমিকা

প্রাচীন ভারতীয় রাজনীতির এক অমোঘ দৈব অস্ত্র বিষকন্যা। এক অপরূপা মোহিনী নারী - যে পুরুষ তাঁকে কামনা করে তার সর্বনাশ হয়। সে রাজাই হোক বা অমাত্য। কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই এমন অস্তিত্বের, তবু কল্পকাহিনীতে এই নিয়ে কত গল্প হয়েছে তার লেখাজোখা নেই। যেমন, শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের প্রবল জনপ্রিয় ঐতিহাসিক কাহিনী বিষকন্যা। ষোড়শ মহাজনপদের এই কাহিনীর আর একটি চিত্রনাট্যরূপ উপন্যাস তিনি লিখেছেন - “বহু যুগের ওপার হতে”।

আমাদের এই শ্রুতিনাটক এই দুইটি কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। নাটকের প্রেম প্রতিশোধের ট্র্যাক অক্ষুণ্ণ রেখে আমরা উল্কাকে সামান্য বেশি অধিকার দেবার চেষ্টা করেছি। রতিক্রীড়ায় পারদর্শিতাকে ছাপিয়ে রাজনীতির সিদ্ধান্তের অধিকার, তাও পিতৃতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যে, সেসব চাইলে এক বিষকন্যাকে কতটা কী পেতে হয় এইটুকুই আমাদের খোঁজ এই নাটকে। সংলাপের অংশবিশেষ এখানে থাকল।

নির্বাচিত চিত্রনাট্য

কথক

স্থান মগধ। ষোড়শ মহাজনপদের রাজারা তখনও সম্রাট হয়ে না উঠলেও মগধের অশ্বমেধের ঘোড়া প্রায় প্রস্তুত। অজাতশত্রুর পিতৃহত্যার কলঙ্কে অভিষিক্ত হয়েছে শিশুনাগ বংশ , মগধে তার প্রায় একশো বছর অতিক্রান্ত। ম্যাসিডোনীয়ার দিগ্বিজয়ী বীর তখন সবেমাত্র বালক।

মগধের সিংহাসনে রাজা এখন চণ্ড। তাঁর অত্যাচারের লৌহমুষ্টি যত কঠিন, ষোড়শ মহাজনপদের ভাগ্য ঠিক ততটাই নিশ্চিত -

ক্ষমতার পালাবদলের সময় আসছে।

দৃশ্য এক

ঘোষক

শোনো শোনো শোনো

পাটলিপুত্রের নাগরিকবৃন্দ শোনো

পরমভট্টারক শ্রীমন্মহারাজ চণ্ড যে দণ্ডাজ্ঞা দিয়েছেন শোনো। মন্ত্রী শিবমিশ্র মহারাজ চণ্ডের আজ্ঞা অমান্য করেছিল। তাই সে রাজদ্রোহের অপরাধে অভিযুক্ত। মহারাজ চণ্ডের দণ্ডাজ্ঞা এই যে, পাটলিপুত্রের মহাশ্মশানে বালুর মধ্যে শিবমিশ্রকে আকণ্ঠ প্রোথিত করে রাখা হবে। রাত্রে শিবাদল এসে শিবমিশ্রকে জীবন্ত ছিঁড়ে খাবে।

পাটলিপুত্রের নাগরিকবৃন্দ

আজ মহাশ্মশানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। যদি কেউ শিবমিশ্রকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে তার শূলদণ্ড হবে। সাবধান - সাবধান

নাগরিক কোলাহল। শিকল টানার শব্দ।

(রাজদরবার আবহ)

চণ্ড: আজ সারারাত নাচ দেখব। সব নর্তকী নাভির ওপর দীপ জ্বালিয়ে নাচবে। আলো ফোটার আগে দীপ যদি নিভে যায় ধরে শ্মশানে পুঁতে দেব। শিবমিশ্রকে তখন বালির মধ্যে নাচ দেখাস, হা হা হা। তা শিবমিশ্র এখন কী করছে বলতে পার কেউ? গণদেব, তুমি বল

গণদেব: আজ্ঞে মহারাজ, এইমাত্র দেখে আসছি তিনি শ্মশানে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে শ্মশানশোভা নিরীক্ষণ করছেন। ব্রাহ্মণভোজন করাব বলে মোদক নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখলাম ব্রাহ্মণের মিষ্টান্নে রুচি নেই।

চণ্ড: হাহাহা। আমার মুখের ওপর কথা বলে এত স্পর্ধা। আজ রাত্রে সে শৃগালের খাদ্য হবে। তোমরা স্মরণ রেখ - আমার, মহারাজ চণ্ডের বিরুদ্ধাচরণ করলে কী দণ্ড হয়, স্মরণ রেখ। সুরা দাও।

কঞ্চুকী মহাশয়, জ্যোতিষাচার্য? তোমরা একত্রে? কী সংবাদ?

জ্যোতিষাচার্য : মহারাজের অন্তঃপুরে দাসী মোরিকা একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন মহারাজ।

চণ্ড: মোরিকা কন্যা প্রসব করেছে, তাতে গ্রহাচার্যার কী প্রয়োজন? তুমি গণনা ছেড়ে দাইয়ের কাজ ধরলে নাকি?

জ্যোতিষাচার্য: মহারাজ, দাসীকন্যা হলেও তার পিতা আপনি। আমি জন্মপত্রিকা প্রস্তুত করেছি।

চণ্ড : উদ্ধার করেছ। তোমার একটা গণনাও মেলেনা, লিচ্ছবীগুলোকে কবে যমালয়ে পাঠাব তাও বলতে পার না। আহ আমার সিংহাসন দুলছে কেন?

বটুক: আজ্ঞে আমি মহারাজ। আপনার সিংহাসনের দোলার শিকলে ঝুলে ঝুলে চারদিকে নজর রাখছি।

চণ্ড: বটুক! শিকল বেয়ে ফের ওপরে উঠেছিস? নেমে আয় মর্কট!

বটুক: যথা আজ্ঞা মহারাজ!

শিকলের শব্দ

চণ্ড: তা কি বলছিলে গ্রহাচার্য? সে কন্যা কেমন? সুলক্ষণা?

জ্যোতিষাচার্য: মহারাজ, জাতিকার কোষ্ঠীতে অশুভ লক্ষণ মহারাজ। মঙ্গল এবং শনি পিতৃস্থানে পূর্ণদৃষ্টি দিচ্ছে।

বটুকভট্ট : গ্রহবিপ্র মহাশয়া, রাজার কোপদৃষ্টিটা ভুলবেন না। কিছু নিদান দিয়ে ফেলুন, কোনো যাগ যজ্ঞ উপাচার?

জ্যোতিষাচার্য: ক্ষমা করবেন রাজন্। এই কন্যা, বড়ই - বড়ই কুলক্ষণা। প্রিয়জনের অনিষ্টকারিণী। সাক্ষাৎ বিষকন্যা।

চণ্ড: বিষকন্যা!

জ্যোতিষাচার্য : নবজাতিকাকে এই দণ্ডে ত্যাগ করুন মহারাজ - শুভমস্তু শুভমস্তু

বটুক: রাজন, গ্রহবিপ্রের কথা শুনবেন না, বটুকভট্টের কথা শুনুন। বিষকন্যা জন্মেছে ভালো হয়েছে। দাসীকন্যাটাকে সযত্নে পালন করুন। সে যখন বড়সড় হবে তখন তাকে নগরনটী করে বসিয়ে দেবেন। দুষ্ট প্রজারা একে একে যমালয়ে প্রস্থান করবে।

চণ্ড: বটুক, তোর জিভ উপড়ে ফেলব

বটুক: এই নিন মহারাজ অ্যা অ্যা অ্যা

চণ্ড: হাহাহা, মর্কট। তা গ্রহাচার্য, ঐ দাসীটাকে আজ কন্যা সমেত পুঁতে ফেলব। তাতে গ্রহদোষ খণ্ডন হবে তো?

গ্রহাচার্য: মহারাজ, কন্যাকে ভাগীরথীর জলে বিসর্জন দিন। কন্যার মাতার কোনো অপরাধ নেই, তাকে এমন কঠোর দণ্ড,-

চণ্ড: কোনো অপরাধ নেই? এমন কুলক্ষণা কন্যা সে প্রসব করে কেন?

গ্রহাচার্য: মহারাজ -

চণ্ড: থাক, তোমার বাক-বিস্তার নিষ্প্রয়োজন। মোরিকা নিজের হাতে বিষকন্যাটাকে জীবন্ত সমাধি দিক। তাহলে ওকে আমি প্রাণভিক্ষা দেব। প্রহরী, এই দণ্ডে দাসীটাকে বের করে দাও। মহাশ্মশানে যাক। সভা এখানেই ভঙ্গ হল। আমি এখন খাব, তারপর নাচ দেখব।

বটুক: যথা আজ্ঞা মহারাজ।

দৃশ্য দুই

(শিশুকণ্ঠের কান্না, শৃগালের ডাক, মহাশ্মশানে ঝিঁঝিঁর শব্দ)

মোরিকা: কাঁদিসনি মা, কাঁদিসনি। ভয় নেই, আমি তো আছি। আমি তো আছি। ঐ যে মা গঙ্গা। মা গো, পাপ ধুয়ে যাও গো মা, পাপ ধুয়ে যাও। এইটুকু দুধের বাছা আমার, সে নাকি বিষকন্যে! আর এই রাজা চণ্ড? তার যে দাঁতে বিষ, জিভে বিষ, সারা রাজ্য বিষের জ্বালায় জ্বলে গেল, তার কোনো বিহিত নেই। আমার এই অবোধ শিশু হল বিষকন্যা!

(শিশুর কান্না)

ওরে বাছা রে, কেন এলি এই অভাগীর কোলে মা আমার? তোকে এই শ্মশানে কোথায় ফেলে যাব? না, না, আমি তা পারব না

(হাঁপাতে হাঁপাতে)

ও গো শ্মশানদেবতা, তোমার অজানা কিচ্ছু নেই। (কান্না) আমাকে নাও গো দেবতা, আমায় নাও। আমার এই দুধের বাছাকে রক্ষা কর, হে যক্ষ, হে প্রেত, তোমরা আমার বাছাকে রক্ষা কর।

শিবমিশ্র: কে? কে ওখানে? শোনো, তুমি প্রেত পিশাচ নিশাচর যেই হও আমায় রক্ষা কর।

মোরিকা : ও মা গো, এ কে? কে তুমি? গলা অবধি পুঁতে রেখেছে বালিতে!

শিবমিশ্র: ভয় নেই- আমি মানুষ। আমার নাম শিবমিশ্র। তুমি যেই হও আমাকে বাঁচাও। শৃগালে আমার মুখ থেকে মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে। আমাকে বাঁচাও।

মোরিকা: (হাঁপ ধরা অবস্থায়) মন্ত্রী শিবমিশ্র! আমার কাছে খনিত্র আছে, আমি বার করছি আপনাকে বালি থেকে।

শিবমিশ্র: আহ, অবশেষে মুক্তি। তুমি কে? এই রাত্রে মহাশ্মশানে শিশুকন্যা নিয়ে কেন এসেছ?

মোরিকা: আমি, আমি (হাঁফিয়ে) রাজপুরীর দাসী। আমার ক-কন্যা - আহ্ - তার প্রাণদণ্ড -

শিবমিশ্র: তুমি দাসী ময়ূরিকা না? তোমার শিশুকন্যা - চণ্ডের ঔরসজাত? তার অপরাধ কী? চণ্ডের কন্যা হয়ে জন্মানোও অপরাধ নাকি?

মোরিকা: আমার কন্যা - বিষ - বিষকন্যা -

শিবমিশ্র: কী বললে? মোরিকা? এই যে, আমার কোলে মাথা দাও, হ্যাঁ। কী বললে তুমি? এই শিশু বিষকন্যা?

মোরিকা: (অসংলগ্ন ভাবে) গ্রহাচার্য বলেছেন - আমার কন্যা পিতার অনিষ্ট - কারিণী - বিষ-কন্যা

শিবমিশ্র: পিতার অনিষ্টকারিণী। বিষকন্যা! মোরিকা! সাড়া দাও, মোরিকা!

হৃদস্পন্দন স্তব্ধ।

(শিশুর কান্না)

বিষকন্যা! মহাশ্মশানে জাহ্নবী সাক্ষাতে এ কি অপূর্ব যোগাযোগ! মগধের এই প্রাচীন অমাত্য আজ উন্মাদ রাজার বিরুদ্ধাচরণ করে রাজদ্রোহে অভিযুক্ত। মগধের এই নবজাতিকা শুধুমাত্র জন্মগ্রহণ করে রাজদ্রোহে অভিযুক্ত। দুজনেই প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত!

এই ভাল, এই কন্যা এখন আমার। আমি, ব্রাহ্মণ শিবমিশ্র মহাশ্মশানের চিতার নামে শপথ নিচ্ছি, এই কন্যাকে একদিন মগধের বুকে ফিরিয়ে আনব, চণ্ডের বিনাশ করতে, শিশুনাগ বংশ ধ্বংস করতে। শ্মশানের চিতার সম্মুখে আজ আমি এর নাম দিলাম উল্কা।

দৃশ্য তিন

জঙ্গলের দৃশ্য

বৃকোদর: ওরে বাবা কি অন্ধকার। শিবমিশ্রের কন্যা এত দুর্গম স্থানে এসে উঠেছে? এ যে দিনদুপুরেই রাতদুপুর দেখি। উহ, শিবমিশ্র ঘোড়া পর্যন্ত আনতে নিষেধ করেছিলেন, এ যা জঙ্গল, এখানে হাতিতে চড়ে এলেও কেউ দেখার নেই।

(হাঁপ ধরা অবস্থায়)

নাহ, শিবমিশ্রের গোপন পত্র তাঁর কন্যা অবধি পৌঁছানোর আগেই না বাঘের পেটে যাই। এই গুঁড়িটায় একটু বসি। উফফ।

আহ। এই পার্বত্য অঞ্চলে সে কন্যা থাকে কোথায়? শিবমিশ্র কখনও বলেননি। এমনকি বৈশালীর কুলপতিরাও বিশেষ জানেন না। ষোল বৎসরের এই গোপনীয়তা যখন তিনি আমার কাছে, এই বৃকোদরের কাছে ভঙ্গ করেছেন ধরে নিতে হয় শিশুনাগ বংশের শেষের সূচনা - ওরে বাবা। একি একি, এ যে ময়াল সাপ। বাঁচাও বাঁচাও!

(তীরের শব্দ)

উল্কা: স্থির হয়ে থাকুন ভদ্র। আপনি যত অস্থির হবেন সর্পবেষ্টন ততই কঠিন হবে।

(কুঠারাঘাত)

বৃকোদর: ধন্য, ধন্য। কুঠারের এক আঘাতে ময়ালের মুণ্ডচ্ছেদ! প্রণাম দেবী! প্রণাম! আপনি আমার প্রাণ রক্ষা করেছেন। একি, একি! তরবারি কেন?

উল্কা: এই দুর্গম অঞ্চলে আনাড়ির মত ঘুরে বেড়াচ্ছ, কোথাকার চর তুমি? মগধ? বৈশালী? অবন্তী? উত্তর দাও নইলে এই তরবারি তোমার কণ্ঠে প্রবেশ করবে।

বৃকোদর: আপনি ভুল বুঝছেন দেবী, আমি চর নই। আমার নাম বৃকোদর, আমি বৈশালী থেকে আসছি বটে, কিন্তু চর নই। আমার বন্ধুকন্যার সন্ধানে এসেছি এখানে।

উল্কা: বন্ধুকন্যা?এই পার্বত্য প্রদেশে? আষাঢ়ে গল্প রাখ। তোমার ঝোলায় কী আছে?

বৃকোদর: ঝোলায় কিছুই নেই, চিপিটক, শুষ্ক মোদক আর কিছু কার্ষাপণ

উল্কা: তাই? আর কিছু নেই? শুষ্ক মোদক নিয়ে বন্ধুকন্যাকে খুঁজছিলেন বৃকোদর? ঝোলাটা তবে খাদে ফেলে দিই?

নাগবন্ধু: সর্বনাশ, না না, দয়া করুন। ফেলবেন না, মহা সর্বনাশ হয়ে যাবে।

উল্কা: আমার ধৈর্য্য কম বৃকোদর। শেষবার প্রশ্ন করছি, কী আছে ঝোলায়?

বৃকোদর: আমার বন্ধু তাঁর কন্যার উদ্দেশ্যে একটি পত্র দিয়েছেন। সঠিক সময়ে তা না পৌঁছতে পারলে মহা বিপর্যয় হবে দেবী।

উল্কা: দেখি, বার কর কী পত্র।

বৃকোদর: কিন্তু কিন্তু

উল্কা : এখনই

বৃকোদর: হায় হায়! বন্ধু শিবমিশ্র! আমি বন্ধু কর্তব্যে ব্যর্থ হলাম। দেবী, আপনি বরং আমার প্রাণনাশ করুন, তারপর পত্র দেখবেন।

উল্কা: শিবমিশ্র! আপনি ভগ্ননাসিক বৃকোদর?

বৃকোদর: অ্যাঁ? হ্যাঁ, কিন্তু এই নাম আপনি কী করে-

উল্কা: (তরবারি সংবরণ করে) আমিই উল্কা। দিন, পিতার পত্র।

বৃকোদর: অ্যাঁ? উল্কা? তাই তো! ষোড়শী, অপূর্ব সুন্দরী, অঙ্গে যোদ্ধাবেশ! ধনুর্বিদ্যা, পরশু, তরবারি চালনায় এমন নৈপুণ্য! ধন্য, ধন্য। এই নাও কন্যা, তোমার পত্র।

উল্কা: বেশ। আপনি আমার সঙ্গে আসুন। আপনার নির্বুদ্ধিতার কারণে সর্পবিনাশ হয়েছে, আপনাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

বৃকোদর: অ্যাঁ? সর্পবিনাশের জন্য প্রায়শ্চিত্ত?

উল্কা: এই পার্বত্য প্রদেশে মহাদেব এবং সর্প আমাদের আরাধ্য দেবতা। জ্ঞানত সর্পহত্যা করলে প্রায়শ্চিত্ত করতেই হয়। বিলম্ব করবেন না। ওখানে আচার্য নাগবন্ধুর কুটীর। যান, ভেতরে যান।

বৃকোদর: নাগবন্ধু এখানে? তাকে শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ে না। এখন বুঝতে পেরেছি। শিবমিশ্র তাঁর পরম সুহৃদকে দায়িত্ব দিয়েছেন কন্যাকে পালন করার। কল্যাণী, তোমার মঙ্গল হোক।

(আগুনে কাঠ ফাটার শব্দ)

উল্কা: পিতা, বড় আশা ছিল একবার আপনার দর্শন পাব। ষোল বৎসর এই প্রদেশে শুধু আপনার পত্র পেয়েছি। শনিচরীর কাছে যতবার আমার পিতামাতার সন্ধান চেয়েছি সে আপনার নাম বলেছে। কঠিন অনুশীলনের সময় ক্লান্ত হয়ে নাগবন্ধুর কাছে যতবার বিরতি চেয়েছি সে আপনার নাম বলেছে। বিষের জ্বালায় যতবার আর্তনাদ করে কেঁদেছি উপজাতির গুরুমা আপনাকে স্মরণ করিয়েছেন। আপনি লিখেছিলেন নাগবন্ধু ব্যতীত অন্য কারুর থেকে পত্র পেলে বুঝে নিতে আমার জীবনের সন্ধিক্ষণ আসন্ন। এতদিনের অধীত গুপ্তবিদ্যা প্রয়োগের দিন আসন্ন। তাই, একবার আপনার সাক্ষাতের অভিলাষ ছিল পিতা।

(থেমে)

হয়ত এই সঠিক পন্থা। আপনার বিচারে আমার সংশয় নেই। আপনাকে প্রণাম।

(ভয়েস ওভার) শিবমিশ্র

উল্কা

কন্যা, ষোল বৎসর পরে তোমাকে আজ দেখতে বড় সাধ হয়। কিন্তু আমি নিরুপায়। হয়ত কখনও আমাদের সাক্ষাত হবে, যদিও তার আশা ক্ষীণ। রাজকার্যে আবেগ অহিতকর। নাগবন্ধুর থেকে শুনেছি নীতিশাস্ত্রে ইতিমধ্যেই তুমি ব্যুৎপত্তি লাভ করেছ। আমার এই পত্রে যা সত্য আছে, যা নির্দেশ আছে, তা একে একে আত্তীকরণ করার সাধ্য তোমার আছে বলেই আমার বিশ্বাস। নচেৎ ধিক শিবমিশ্রের এই ষোল বৎসরকালের সাধনাকে, ধিক তার প্রজাতন্ত্রের স্বপ্নকে।

কন্যা, তুমি আমার মানসকন্যা। কিন্তু তুমি আমার ঔরসজাত কন্যা নও। পাটলিপুত্রের মহাশ্মশান থেকে তোমাকে কুড়িয়ে এনেছিলাম আমি। মগধের রাজা চণ্ডের ঔরসে তাঁর অন্তঃপুরের দাসী ময়ূরিকার গর্ভে তোমার জন্ম। গ্রহাচার্য ভবিষ্যদ্বাণী করেন তুমি পিতৃঘাতিনী বিষকন্যা হবে, তাই মহারাজ তোমায় মৃত্যুদণ্ড দেন।

ভবিতব্যের খেলা দেখ উল্কা, যে পাটলিপুত্রের মহাশ্মশানে তোমাকে পুঁতে ফেলার বিধান হল ময়ূরিকার ওপরে, সেইখানে সেইরাত্রেই আমি জীবন্ত সমাধিস্থ হয়েছিলাম, শৃগালের খাদ্য হিসাবে। রাজার সমালোচনা করেছিলাম, চণ্ড তাই আমাকে এই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সেই রাত্রে তোমার মা মোরিকা আমাকে উদ্ধার করে, তারপর তোমাকে আমার কোলে সঁপে দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। নাগবন্ধুর সাহায্যে আমি মগধ ত্যাগ করার আগে পাটলিপুত্রের মহাশ্মশানে অনির্বাণ চুল্লীকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়েছিলাম এই স্বৈরাচার, শিশুনাগ বংশের এই অনাচারের শেষ দেখে আমি ছাড়ব।

বৈশালীর গণপরিষদ সেদিন আমাকে মিত্র হিসাবে স্বীকার করেন। এতদিন কুলপতিদের কূট পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে আমি নিশ্চিত হয়েছি মগধে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে তাঁরাও সুখী হবেন। এইভাবে একদিন সম্পূর্ণ জম্বুদ্বীপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। কোনো রাজা রাণী নয়, প্রজাই হবে তাদের ভাগ্যবিধাতা।

কন্যা, এই অসম্ভবের স্বপ্ন আমি কেবল বৈশালীর কুলপতিদের ওপরে ভরসা করে দেখিনি। আমার ভরসা এক এবং একমাত্র কূটনীতি এবং অবশ্যই তুমি।

তোমাকে সেই শিশুবয়সে আমি নাগজাতির কাছে সমর্পণ করি একটি দূরদৃষ্টি নিয়ে। নাগজাতি স্বাধীন উপজাতি, তারা কোনো রাজা মানে না। তাদের বিষ চিহ্নিত এবং প্রয়োগ করার গুপ্তবিদ্যা শুধু কিংবদন্তী নয়, সত্য। আচার্য নাগবন্ধুর থেকে আমি জেনেছিলাম। তিনি দূর সম্পর্কে এই উপজাতির আত্মীয়, তা আমি জানতাম।তাঁর মাধ্যমে নাগজাতির কাছে আমি তোমাকে সমর্পণ করেছিলাম যাতে তুমি সেই বিষবিদ্যা আয়ত্ত করতে পার।

এইমাত্র সংবাদ পেয়েছি মগধে প্রজারা চণ্ডকে সিংহাসনচ্যুত করে শিশুনাগ বংশেরই এক যুবককে রাজা ঘোষণা করেছে। মূর্খ প্রজারা গণতন্ত্রের এমন সুযোগ হেলায় হারিয়েছে। কিন্তু আমার শেষ দান এখনও বাকি।

আমার নীতি সহজ। মগধের নতুন রাজা সেনজিৎ যুবক। তাঁকে বশীভূত করার মত বিদ্যা তোমার আছে বলেই আমার বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে সঙ্গমকালে ধীরে ধীরে বিষপ্রয়োগ করে প্রথমে তাঁর প্রাণনাশ সুনিশ্চিত করবে তুমি। তারপর মগধে তোমার নেতৃত্বে গণপরিষদ তৈরী হবে রাজ্যচালনার নিমিত্ত, এবং তাদের প্রথম প্রণীত আইনে নাগজাতি মগধে জলস্পর্শের অধিকার পাবে। আচার্য নাগবন্ধু তোমাকে সহায়তা করবেন। মগধ সবে সূচনা, আমাদের মূল লক্ষ্য জম্বুদ্বীপ।

এই পত্রের সঙ্গে বৈশালীর কুলপতিদের স্বাক্ষরিত দূতপত্র পাঠালাম, তুমি তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে মগধে যাবে। অশ্ব এবং অন্যান্য ব্যবস্থা বৃকোদর করে দেবে। রাজদরবারে মহিলা প্রতিনিধি বিরল না হলেও, মগধে বিরল। বাকি তোমার ওপর।

আশীর্বাদ রইল, বিজয়ী ভব।

পুনশ্চ: মহারাজ চণ্ডকে প্রজারা নাকি হত্যা করেনি। তা যদি সত্য হয়, তোমার মা মোরিকার ঋণ শোধ হয়নি।

ইতি - শিবমিশ্র

দৃশ্য চার

পথিক- উরে বাবা, নগর এখনও চার কোশ। এই দিকে রাজার বন, সেখানে তো আবার ঢোকা মানা। আগের রাজা হাতে মাথা কাটত, এ রাজা এখন কী করে। সে ষণ্ডা চাঁড়ালটা পাহারায় নেই। এই গাছের তলায় বসে দুটি কলা খেয়ে জিরিয়ে নিই পরে দেখা যাবে।

ঘোড়ার খুরের শব্দ

উল্কা: পথিক, পাটলিপুত্র কতদূরে?

পথিক : ঐ সোজা রাস্তা চার কোশ বটে। নিয়ম মেনে ঐ দিক দিয়ে চলে যাও ঠাকরুণ।

উল্কা: আর নিয়ম না মেনে গেলে?

পথিক: উরে বাবা, রাজার বনের মধ্যে দিয়ে যাবেন না ঠাকরুণ, সে চাঁড়াল রক্ষী কখন এসে পড়ে-

উল্কা: চণ্ডাল রক্ষীর ভয়ে বনে যাব না, তাও কি হয়?

বাসবী, বিপাশা, তোমরা সোজা রাস্তা ধরে যাও, আমি বনের মধ্য দিয়ে যাব।

(ঘোড়ার খুরের শব্দ মিলিয়ে যায়)

পথিক: হুঁ, দেবীর দেখচি ঘোটকে আগমন।

(বনের মধ্যে)

উল্কা: বাতাসে জলের গন্ধ আছে, শব্দ নেই। অর্থাৎ ঝিল আছে সামনে। কিন্তু মৃগয়া কাননে এভাবে কাঁটা দিয়ে ঘেরা কেন? কী রহস্য আছে এখানে? দেখি সামান্য তারজালি দিয়ে উল্কাকে কে আটকায়!

(কুঠারাঘাতে তারজালি ছেঁড়ার শব্দ)

চণ্ড: জল! জল!

উল্কা: বেদী! তার ওপরে শৃঙ্খলাবদ্ধ ওটা কী? মানুষ? কোনও অপরাধী হয়ত।

শ্বেতব, এখানে চুপ করে দাঁড়াও। আমি কাছে গিয়ে ভালো করে দেখি।

চণ্ড: জল, জল। জল দে, জল

উল্কা: জল খাবে? এই নাও, চর্মথলিতে অল্প জল আছে। তোমার হাত নেই, পা নেই, খাবে কেমন করে? হাঁ কর, খাইয়ে দেব।

চণ্ড: আ আ জল জল

(জল পান করে)

চণ্ড: আরোও জল দে। থুঃ, মদ দে। মদ খাব।

উল্কা: মদ? তুমি তো সামান্য অপরাধী নও। কে তুমি?

চণ্ড: আমি কে জানিস না?

উল্কা : না, পাটলিপুত্রে আমি নতুন এসেছি -

চণ্ড: দূর হ দূর হ, একদিন তোদের পায়ের তলায় পিষেছি। যেদিন শেকল ছিঁড়ে বেরোব সেদিন ফের তোদের - যা যা দূর হ

উল্কা : তোমার নাম কী?

চণ্ড: মহারাজ চণ্ডের নাম জানিস না তুই? কে না জানে আমার নাম? আমি চণ্ড- তোদের দণ্ডমুণ্ডের অধীশ্বর চণ্ড। মগধের ন্যায্য অধিপতি - মহারাজ চণ্ড।

উল্কা: ও, তুমিই ভূতপৃর্ব রাজা চণ্ড?

চণ্ড: আমিই রাজা। মগধে একটাই রাজা - আমি। কুক্করী, শুনলি? থুঃ

উল্কা: চণ্ড, দাসী ময়ূরিকাকে মনে পড়ে?

চণ্ড: কে? কে ময়ূরিকা?

উল্কা: ময়ূরিকা, তোমার ঔরসে গর্ভে বিষকন্যা ধারণ করেছিল।

চণ্ড: বিষকন্যা! তাই তো। তাকে জীবন্ত সমাধি দিয়েছিলাম। শৃগালে ছিঁড়ে খেয়েছিল। ঠিক শিবমিশ্রের মত। তোকেও - তোকেও তাই করব। শৃগালে ছিঁড়ে খাওয়াব।

উল্কা: তোর ঔরসজাত বিষকন্যা অত সহজে মরেনি। শিশুনাগ বংশে রক্ত দিয়ে পিতৃঋণ শোধ করার নিয়মরক্ষা না করে সে মরে কেমন করে? তোর সামনে দাঁড়িয়ে তোর কন্যা। এই বংশের রক্ত আমার শরীরে। পিতৃহত্যা আমার ভবিতব্য।

( তরবারি দিয়ে আঘাত)

চণ্ড: বিষকন্যা - আহ

কুম্ভ : কে? কে ওখানে? অপরাধীর কাছে যাওয়া নিষেধ, কার এত সাহস কুম্ভের নিষেধ অমান্য করে? একি, চণ্ডের গলা কাটল কে? তুই? এ তো দেখছি একটা মেয়েছেলে

উল্কা: অনার্য চণ্ডাল- স্পর্শ করবে না আমাকে।

কুম্ভ: এহ, কেন, চাঁড়াল ছুঁলে কী হবে? বেশ, তোকে ভালো করে ছোঁব তাহলে, আয় কাছে।

উল্কা: আমায় ছুঁলে মরতে হয়। বর্বর! এই নে

(তরবারির আঘাত)

শ্বেতব, চল। আর সময় নষ্ট নয়। পিতার প্রথম কাজ সমাপ্ত হল।



কথক

উল্কার ব্যক্তিগত আক্রোশ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শিবমিশ্র? শিশুনাগ বংশকে উৎখাত করলেই তো তাঁর জিঘাংসা চরিতার্থ হয়। তাহলে গণতন্ত্রের এই হুজুগ কেন? রাজাই যদি না থাকে তবে তাঁর মতো অমাত্যের স্থান ঠিক কোথায়?

আজ আড়াই হাজার বছর পরে হয়ত এর উত্তর খোঁজা খুব কঠিন হবে না। রাজা, রাজবংশ না থাকলে

ক্ষমতার হস্তান্তর হয় মাত্র। রূপান্তর বিশেষ হয় না। হয়ত গণতন্ত্রের ধোঁকার টাটির আড়ালে রাজত্বের ঝুঁটি ধরে থেকে যান শিবমিশ্র, চাণক্যের মতো মুষ্টিমেয় অমাত্যই?

থাক সে কূটতর্ক। উল্কা তো এল মগধে। চণ্ড মরেছে। কিন্তু বর্তমান রাজা সেনজিত? তিনি কোথায়? আসুন দেখি, শোন নদীর ধারে অশীতিপর বটুকভট্ট শোরগোল জুড়েছেন কেন।

দৃশ্য পাঁচ

বটুক: মহারাজ? মহারাজ? দোহাই আপনার নদী থেকে উঠে আসুন। (বিড়বিড় করে) এই এতক্ষণ ডুবসাঁতার দিয়ে থাকতে পারে মানুষে? এখন একটা ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেলে প্রজারা আমার নাড়িভুঁড়ি নিয়ে গেণ্ডুয়া খেলবে। কি দস্যি ছেলে বাপু এই সেনজিৎ। এই কারণেই শাস্ত্রে পইপই করে মানা করেছে কচি বয়সে সিংহাসনে না বসাতে। না একটা রক্ষী, না কিছু, যখন তখন যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবে।

(চিৎকার করে)

ও মহারাজ! নদীর তলায় রহস্য পরে খুঁজবেন। উঠে আসুন। ডাঙার প্রজারা আপনাকে যেমন ভালোবাসে কুমীর কামটে আপনাকে তেমনধারা ভালোবাসবে শাস্ত্রে এমন লেখা নেই।

এই যে উঠেছেন, উফফ। হাত পা পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছিল আমার যাই হোক। দেখ দেখি, বসন্ত সমাগমে গাছে গাছে নতুন কুঁড়ি ধরছে, কোকিলে তান ধরছে, রাজপুরীর যবনী প্রতিহারীটাও আসার সময় শুনতে পেলুম গুনগুন করে বিজাতীয় গান ধরেছে -

সেনজিৎ: আমার শুকনো বস্ত্র এনেছ না কাক কোকিলের গান শুনতে গিয়ে ভুলে মেরেছ?

বটুক: মহারাজের বস্ত্র আনতে ভুলব, বলি গর্দানের মায়া নেই আমার? এই যে, মহারাজ ধরুন। হা বসন্ত, তোমার দিন গিয়াছে। মগধেশ্বরের মন তাঁর দেহের মতই পাষাণ কঠিন। নইলে এমন রঙীন ঋতুর সকল ধর্ম উপেক্ষা করে রাজ অন্তঃপুর শূন্য রেখে মহারাজ এমন -

সেনজিৎ : বটুক, তুমি কঞ্চুকী মশাইকে ভুলেছ। অন্তঃপুরে তিনি আছেন

বটুক: অবশ্যই আছেন। খাঁ খাঁ অন্তঃপুরে সে হতভাগ্য প্রেতের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আহা, বেচারার মুখ দেখলে পাষাণও দ্রব হয়।

সেনজিৎ : সবাই বেচারা, সবাই আহা। কেবল আমার সঙ্গে রাজকার্যে বেরোলেই তোমার যত ধর্মবুদ্ধির উদয় হয়। তোমার বকুনি শুনে খিদে পেয়ে গেল। চল, ঘোড়ায় ওঠ।

বটুক: নদীতে ডুব দিয়ে রাজকার্য হয় জানা ছিল না রাজন। তা এমন দুরূহ কাজে মহামাত্য নয়, রক্ষী নয়, এই বটুকভট্ট কেন প্রয়োজন জানতে পারি মহারাজ?

সেনজিৎ: যাব্বাবা, তোমার বাণী শুনে আমার ঘোড়া হাসবে এই প্রয়োজন। চপলতায় মগধের কারোর এত প্রতিভা নেই। ওঠো, ওঠো, ঘোড়ায় ওঠ। শোন নদীর নাব্যতা কমছে। ভবিষ্যতে বিপদ আছে। মন্ত্রণা করতে হবে।

বটুক: উরে বাবা এই বয়সে বাতের ব্যথা নিয়ে ঘোড়ায় - এঁ এঁ (ঘোড়ায় চড়ে) উফ কি অত্যাচারী রাজা রে বাবা।

সেনজিৎ : অত্যাচারের দেখেছ কি বটুক? চলো মৃগয়া-বন দিয়ে, শীঘ্র হবে। তোমায় মৃগয়া-কাননে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করি।

বটুক: মহারাজ, মগধে কি কোনো ললনা, আট থেকে আশি কোনো নারী নেই যে আমাকে নিয়ে মৃগয়া করবেন? উফ্ কোমরটা গেল রে বাবা, কি ঝাঁকুনি।

সেনজিৎ: আছে বলেই তো তোমাকে সঙ্গে রাখি। অপ্সরার মোহিনী মায়াও তোমার প্রগলভতার কাছে হার মানবে।

বটুক : উফ্, ঝাঁকুনি!

সেনজিৎ : বনের মধ্যে এতটা চলে এলাম, তাকে তো দেখলাম না? সে কৈ?

বটুকভট্ট: কাকে খুঁজছেন মহারাজ? বনদেবী?

সেনজিৎ: কুম্ভকে বনদেবী বলে ডাকতে পার, তার তপ্ত মাথা হয়ত কিঞ্চিত ঠাণ্ডা হবে। কিন্তু সে গেল কৈ?

বটুকভট্ট: অ। প্রহরী কুম্ভ! সেই চণ্ডালটাকে কি প্রয়োজন?

সেনজিৎ: বটুক! কুম্ভ আটবিক জাতির লোক। প্রাচীন আরণ্যক ওরা। বনদেবী যদি সত্যিই থাকেন, তিনি ওর ডাকেই সাড়া দেবেন। ওর সঙ্গে শিষ্টাচার করতে না পার, চুপ করে থেক। কুম্ভ খেপে গেলে পুষ্করের থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কিন্তু সে কোথায়? এ কি! তারজালিকা ছিন্ন করল কে? কুম্ভ! কুম্ভ!

বটুকভট্ট: মহারাজ! ওদিকে যাবেন না, কোনও রক্ষী নেই। চণ্ড যদি একা আপনাকে নাগালে পান - মহারাজ ও মহারাজ, শুনুন। দোহাই!

সেনজিৎ: শশসস। চণ্ডের গলার আওয়াজ পাচ্ছ? সব চুপচাপ! এত জল চায়, গাল দেয়, সেও চুপ?

বটুকভট্ট: ম-মহারাজ -

সেনজিৎ: চণ্ড! চণ্ড! গলায় তরবারির আঘাত। কে হত্যা করল চণ্ডকে?

বটুকভট্ট: চণ্ডের শত্রু তো কম নেই মহারাজ! হয়ত কোনো অজ্ঞাত পরিচয় প্রজা তার পুরোনো জিঘাংসা চরিতার্থ করে গেছে।

সেনজিৎ: জিঘাংসা চরিতার্থ করার আগে খুব সম্ভবত সে চণ্ডকে জল দিয়েছিল। আততায়ী এত সময় নিল, কুম্ভ তাকে দেখতে পেল না? নাকি - ঐ লতাগুল্মের আড়ালে কী ওটা?

সর্বনাশ! এ যে কুম্ভ! তাকে কে হত্যা করল? তরবারির আঘাত। কণ্ঠা বিদীর্ণ করে গিয়েছে।

বটুকভট্ট: ম-মহারাজ, এবার পৈতৃক প্রাণটি নিয়ে ভালোয় ভালোয় নগরে ফিরলে হত না? শ্রীমন্মহারাজের প্রাণের মায়া নেই, এই বটুকভট্টের আছে। আসন্ন মদনোৎসবকালে গৃহিণীকে পতিহারা করতে চাই না কিনা!

সেনজিৎ: ঘোড়ার খুরের চিহ্ন। আততায়ী খুব সম্ভবত নগরের দিকেই গিয়েছে। চণ্ড - বুঝলাম। কিন্তু কুম্ভকে মারল কেন? সাক্ষী রাখতে চায়নি? চল দেখি নগরের দিকে। দুটি দেহই এখনও উষ্ণ, আততায়ী বেশিদূর যায়নি।

বটুকভট্ট: মহারাজ, দয়া করুন। ভূতপূর্ব রাজা চণ্ড বা ঐ অনার্য কুম্ভ- কেউ জানতেও চাইবে না ওরা বেঁচে আছে কিনা। আততায়ীকে ধাওয়া করা কি মগধেশ্বরের কাজ?

সেনজিৎ: আমি স্বেচ্ছায় মগধেশ্বর হইনি, তোমরা জোর করেছ। আজ রাজা হয়েছি বলে আমার মানবধর্ম ভুলতে পারি না। চণ্ডকে আমি যখন মৃত্যুদণ্ড দিইনি এই কাজ আইনবিরুদ্ধ। কুম্ভ রাজকর্মচারী, তাকে হত্যা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আততায়ীকে আমার চাই।

পরবর্তী অংশ শুনুন ইউটিউবে

আপনার মতামত

এর উত্তরে Some User

এই বিভাগের অন্যান্য পোস্টসমূহ

  • টেগার্টের ডায়েরি চ্যাপ্টার ৪-৬

    টেগার্টের ডায়েরি চ্যাপ্টার ৪-৬

    নেতাজির উত্থান, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ, হিজলী জেল হত্যাকাণ্ড এবং প্যালেস্টাইনের আরব বিদ্রোহ

    সিরিজ: ইতিহাস কথা কয় | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 12 আগস্ট 2022 | সময়কাল: 1 ঘন্টা 3 মিনিট 44 সেকেন্ড

    স্বাধীনতার ইতিহাসটা হয়ত কুখ্যাত টেগার্টের চোখ দিয়ে দেখলে, মাষ্টারদা সূর্য সেন, সুভাষ বোস, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এবং অন্যান্য বিপ্লবীরা কি সংগ্রাম করেছেন তার আঁচ পাওয়া যায়। নেতাজির উত্থান এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ থেকে হিজলি জেল হত্যাকান্ড নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের ঘূর্ণিপাকের কেন্দ্রে এই শ্রুতিনাটক।কলকাতার পুলিস কমিশনার টেগার্ট তাঁর সাফল্যমণ্ডিত ইনিংসের বর্ণনা শেষ করে ইন্ডিয়া থেকে রওনা দেবেন প্যালেস্টাইন। আরব বিদ্রোহীদের সায়েস্তা করার টার্গেট নিয়ে।

  • শুধু তোমার জন্য ব্যানার

    শুধু তোমার জন্য

    সিরিজ: গল্প-গাছা | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 26 সেপ্টেম্বর 2021 | সময়কাল: 1 ঘন্টা 29 মিনিট 16 সেকেন্ড

    আসিফা ফেরারী জীবনের শেষ রাতে জ্বরের ঘোরে এক তেঁতুল গাছের সঙ্গে গল্প করছিল। সে গল্পে দেবদাস আছে, বিদ্যাপতি আছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে, আর আছে এক প্রেমের গল্প - তোমাকে চাই। সেসব নিয়েই শ্রুতিনাটক শুধু তোমার জন্য, আসিফা ট্রিলজির দ্বিতীয় অংশ।এর শুরুতে আছে শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস দেবদাস অবলম্বনে শ্রুতিনাটক দেবদাস পাঠ অভিনয়। আর ক্লাইম্যাক্সে আছে ও’হেনরীর “A Service of Love” গল্পের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত শ্রুতিনাটক “তোমাকে চাই।”

  • বর্ষামঙ্গল - গীতি-কবিতা আলেখ্য

    বর্ষামঙ্গল - গীতি-কবিতা আলেখ্য

    সিরিজ: গল্প-গাছা | রচনা: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 01 আগস্ট 2021 | সময়কাল: 44 মিনিট

    ভরা বর্ষায় আঁচল পেতে বসে থাকে বঙ্গজননী। নদীনালার কূল ছাপিয়ে বন্যা হবে। কিছু রোয়া ধান ভেসে যাবে। কুঁড়ে গোয়াল ছেড়ে একটা ছাগল কি দুটো মুর্গি সম্বল করে হেঁটে যাবে চাষাভুষোর দল। সম্বচ্ছর উদ্বাস্তু হতে হয় তাদের। গ্রামের নেড়িগুলো অবাক চোখে দেখবে একরত্তি ভেলাগুলোতে তাদের ঠাঁই নেই। পরে, রোগব্যাধি ক্ষয়ক্ষতির ষোলকলা পূর্ণ করে, জল সরবে, রেখে যাবে প্লাবনভূমির উত্তরাধিকার।

    ভরা বর্ষায় জল বাড়ে তাড়াতাড়ি। নদীতে, রাস্তায়, খাদানে কুলি কামিনরা কাজ বন্ধ করবে, কখনও তার আগেই ঘটে যাবে দুর্ঘটনা। ডুবে নিখোঁজ হয়ে যেতে যেতে মজুরদের মনে পড়বে না কতপুরুষ আগে, বিদেশী রাজাদের শিল্পবিপ্লব হওয়ার আগে, তাদের হাতে লাঙল ছিল, জল সরলে তারা সোনা ফলাত। কোনও এক গাঁয়ের বধূর গোলাভরা ধান ছিলো, উঠোনে আলপনা ছিলো। সে থাক। অপঘাত মানুষকে জাতিস্মর করবে এমন কোনো কথা নেই।

    বর্ষামঙ্গল - আমাদের শেকড়ের কথা। গানে কবিতায় ছবি আঁকি।

  • তিহার থেকে বলছি

    তিহার থেকে বলছি

    সিরিজ: গল্প-গাছা | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 08 মে 2022 | সময়কাল: 1 ঘন্টা 27 মিনিট 25 সেকেন্ড

    শ্রুতিনাটক তিহার থেকে বলছি রবিপ্রেমের ফসল। রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাস শেষের কবিতা, ঘরে বাইরে এবং চতুরঙ্গের কিছু অংশ এক কাল্পনিক চরিত্র আসিফার দৃষ্টিতে পাঠ করব আমরা। আসিফা এক রাজবন্দী। লাবণ্য, বিমলা, দামিনীর অন্বেষণে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত মিশে যায়।

    রাজবন্দী আসিফার মোট তিনটি উপাখ্যান আছে, তিহার থেকে বলছি তার প্রথম কিস্তি। নাটকের মৌলিক অংশটি রইল।

  • গঙ্গাহৃদিপদ্মে

    গঙ্গাহৃদিপদ্মে

    সিরিজ: ইতিহাস কথা কয় | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 23 এপ্রিল 2023 | সময়কাল: 1 ঘন্টা 20 মিনিট 31 সেকেন্ড

    "দেবদাসী সুতনুকা রূপদক্ষ দেবদিন্নকে কামনা করিয়াছিল"

    সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রেমপত্র - ছত্তিসগড়ের যোগমারি গুহায় খোদিত হয়ে আছে আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে। কে সুতনুকা কে দেবদিন্ন, কোথা থেকে এসেছিল তারা, পালিভাষায় সত্যিই কী বলতে চেয়েছিল, ইতিহাস তা জানে না।

    কেমন হয় যদি সুতনুকা আর দেবদিন্নের আদি সাকিন হয় আসলে বাংলাভূমি? কৈবর্ত, শূদ্রদের সে রাজত্ব বলকা দেবী, গঙ্গামায়ের দিব্যি দিয়ে বাইরের শত্তুরদের খেদিয়ে এসেছে এতদিন। তাদের বল্লমের নিশানা দেখে তফাত হয়েছেন আলেকজান্দার স্বয়ং। তাদের সোনার বাংলায় বাণিজ্যে ফসলে সমৃদ্ধিতে জ্বলজ্বল করছে চন্দ্রকেতুগড়। হয়ত এই আলেকজান্ডারের গঙ্গাহৃদি?

    এই সব সারেগামা এসে কোথাও মিলবে আমাদেরই সামনে যোগশিরা গুহায়। সুতনুকা আর দেবদিন্নের ভালোবাসার শেষ অঙ্কে। গঙ্গাহৃদিপদ্মে।

  • টেগার্টের ডায়েরি চ্যাপ্টার ২ - ননীবালা দেবী

    টেগার্টের ডায়েরি চ্যাপ্টার ২

    ননীবালা দেবী

    সিরিজ: ইতিহাস কথা কয় | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 10 আগস্ট 2022 | সময়কাল: 16 মিনিট 9 সেকেন্ড

    আমাদের এই চ্যাপ্টারে আছেন এক ব্ল্যাক উইডো। তিনি হলেন ননীবালা দেবী। ননীবালা দেবী। বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী। অফিসিয়ালি প্রথম থার্ড ডিগ্রী খাওয়া মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবী। শরীরে দুবাটি লঙ্কাবাটা ঢোকানোর পরেও মুখ না খোলা ননীবালা দেবী।

    টেগার্টের ডায়রীর দ্বিতীয় পর্ব, নির্মিত হয়েছে বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দী ননীবালা দেবীর ওপরে। শ্রুতিনাটকের কিছু সংলাপ এখানে রইল।

  • শ্রুতি নাটক - বিদূষক

    বিদূষক

    এডগার অ্যালান পোয়ের ছোটগল্প হপ-ফ্রগ অবলম্বনে শ্রুতিনাটক
    সিরিজ: গা ছমছম | নাট্যরূপ: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 31 অক্টোবার 2021 | সময়কাল: 26 মিনিট 25 সেকেন্ড

    এডগার অ্যালান পো “Hop-Frog” নামে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ সালে। Hop-Frog নামের এক বামন ও বিকলাঙ্গ ব্যক্তি রাজার বিদূষক। তার একমাত্র বন্ধু ছিল ট্রিপেটা নামের এক বামন মেয়ে।রাজা ও তার সাত মন্ত্রী ছিল নিষ্ঠুর ও নৃশংস;  Hop-Frog-কে নিয়মিত অপমান করে, জোর করে মদ খাইয়ে মজা লুটত। এক বিশেষ ভোজসভায় Hop-Frog প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজে পায়।

    হপফ্রগ গল্প হরর, রিভেঞ্জ যত ততটাই মেটাফরিক। রাজা আর তার সাত মন্ত্রীর কাণ্ড দেখে মনে হয়, এরা আদৌ আটটা আলাদা লোক না একই ইউনিট? একটাই রাষ্ট্র, একটাই দফতর, একটাই কুর্সি, সেইরকম না তো? ফ্যাসিজম তো অনেকটা ঐ রাজার মতন, ক্ষমতার মদে দিশেহারা হয়ে যাকে তাকে কামড়ে দেয়। তো কে পারে তার শোধ তুলতে? কী হয় শোধ তোলার পরে? কেমন হয় যদি এই বিন্দুগুলো ঘুরে যায়? পাওয়ার স্ট্রাকচারে যে যেখানে সে সেভাবে তার স্বৈরাচার চালিয়ে যায়, যতক্ষণ তার মেয়াদ। সিংহাসন তার কাজ করে যায়। এইটুকুই?

    এই উত্তরগুলো খুঁজেছি আমরা এই গল্পের অনুপ্রেরণায় লিখিত শ্রুতিনাটক বিদূষকে। এখানে নাটকের অংশবিশেষ রইল সংলাপ আকারে।

  • শরতের খোলা খাম ব্যানার

    শরতের খোলা খাম

    সিরিজ: গল্প-গাছা | নাট্যরূপ: তৃণা চক্রবর্তী, পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    প্রকাশিত: 10 অক্টোবার 2021 | সময়কাল: 59 মিনিট 32 সেকেন্ড

    সাদিক হোসেন, সাকিন মুর্শিদাবাদ

    অনামিকা মিত্র, সাকিন উত্তর কলকাতা

    রাজযোটক যে নয় সাদিক-অনামিকা তা জানতে কোষ্ঠীবিচার লাগবে না। দুর্গ্রহলগ্নে ওদের জন্ম। তাই তো নেট পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশাপাশি সিট পড়ে। সময় বুঝে কালি খতম হয়ে যায় সাদিকের। ঝট করে পেন বাড়িয়ে দেয় পাশ থেকে অচেনা অনামিকা। ডটপেনের মূল্যবাবদ পরীক্ষার পরের চা আর প্রজাপতি বিস্কুটটা অফার করে সাদিক। তারপর? অনামিকার গালে টোল পড়ে, সাদিকের গিটারে বোল ধরে, কাশফুলে লাগে দোল। যা হবার তাই হয়। অথচ তখন সদ্য নয়ের দশক। বাবরি মসজিদ অক্ষত। ভাবা যায়?

    সাদিক অনামিকার প্রেমটা বেশিদিন টেকেনি। কিন্তু টেঁকসই প্রেম ঠিক কেমন? এই যে প্রতি পুজোয় এরা এখনও একজন আরেকজনকে মনে করে চিঠি লেখে, লিখে সে চিঠি রেখে দেয় যার যার ডায়রিতে, এটা প্রেম, না অন্য কিছু? এই চিঠি আর কিছু গান কবিতা নিয়ে শ্রুতিনাটক শরতের খোলা খাম। কিছু চিঠি থাকল এখানে আপনাদের জন্য।